খালেদা জিয়াকে নেওয়া হবে কেরানীগঞ্জ কারাগারে
ঈদের আগে বা পরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকে বেগম জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড এলাকার পরিত্যাক্ত কারাগারে আর ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ তথ্য সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শিগগিরই কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন নির্মিত মহিলা কম্পাউন্ডে স্থানান্তর করার চিন্তাভাবনা চলছে। এরমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা ১৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম এখন থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সেখানে অস্থায়ী আদালত বসানো হবে।
এদিকে বিএনপির ৫ এমপি শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার পর ঈদের আগে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অস্থায়ী এজলাস স্থানান্তর নিয়ে রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম সারোয়ার স্বাক্ষরিত একটি মামলা স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা মহানগরের ১২৫ নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ক নম্বর ৭ এর অস্থায়ী আদালত থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯ (২) নম্বর ধারা অনুযায়ী নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্মুখে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে স্থানান্তর করা হলো।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে ১৭টি মামলা নিষ্পত্তির জন্য কেরানীগঞ্জের কারাগারের সামনে ২ নম্বর ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করে তাতে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
মামলাগুলো স্থানান্তরের বিষয়ে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মুহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে মামলাগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে।’
স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি অনেক পুরাতন, এটা আমরা জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করতে যাচ্ছি। জাদুঘরের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। কাজেই তখন জাদুঘরের কাজ শুরু হয়ে গেলে এখানে আর কাউকে রাখা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সেই জন্য আমরা পাশেই কেরানীগঞ্জে অত্যাধুনিক যে কারাগার আমরা করেছি, সেই কারাগারে আমাদের সব কিছুই সুসম্পন্ন হয়েছে। সেইখানে আমরা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’
কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩০০ নারী বন্দির জন্য কারা কর্তৃপক্ষ একটি কম্পাউন্ড তৈরি করেছে। সেখানে দুইটি চারতলা ভবন আর একটি একতলা ভবন রয়েছে। কারাগারের ভেতরে প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।
একতলা ভবনটি কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে। সেখানে ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিভিআইপি বন্দিদের রাখা হবে। কারা অভ্যন্তরে মোট তিনটি ভবনের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট (ডিভিশনপ্রাপ্ত) একটি ভবনে খালেদা জিয়াকে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই কারাগারের পাশে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসার পরে কারা কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরের বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি সেল ও কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিষয়টি খালেদা জিয়াকে জানানো হয়। তাতে খালেদা জিয়া বিরক্ত হন। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যেতে চান না সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের নির্ধারিত ভিআইপি সেলেও যেতে চান না তিনি। কারা কর্তৃপক্ষকে নিজের এমন মনোভাবের কথা জানিয়েও দিয়েছেন তিনি।
কারা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মহিলাদের জন্য তৈরি কারাগারের কাজ শেষ। ভেতরে একটি বড় মাঠও আছে। পশ্চিম কোনায় রয়েছে একটি ভিআইপি সেড ও খাদ্যভাণ্ডার।
প্রসঙ্গতঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলায়
দণ্ডাদেশ পাওয়া খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রয়েছেন। নিরাপত্তার কথা বলে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালত বসিয়ে খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি মামলার বিচার চলছিল। এখন সেগুলো কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জোর করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। তার বিরুদ্ধে করা ১৭টি মিথ্যা মামলার বিচার কার্যক্রম ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র স্পস্ট হয়েছে। নির্মাণাধীন একটি কারাগারে খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের সরকারি চিন্তা-ভাবনা মনুষ্যত্বহীন কাজ। অবিলম্বে তার জামিনে বাধা প্রদান বন্ধ করার জন্য আমি সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন