আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার বাদী ও আইনজীবীকে হুমকি
বহুল আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামিরা আদালত চত্বরে বাদী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীকে হুমকি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এ মামলার ২১ আসামিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর পর কোর্ট হাজতে নেয়া ও আদালতে উপস্থিত করার সময় আসামিরা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ও বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নানা হুমকি-ধামকি দেন।
বৃহস্পতিবার ছিল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ। এদিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন মামলাটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য্য করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আদালত প্রাঙ্গণে আপনারা দেখেছেন আসামিরা কেমন সন্ত্রাসী তারা কাস্টডি থেকে বের হওয়ার সময় এজহারকারী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। পারলে তারা আজকেই আমাদেরকে সেখানেই খুন করতো। তাদের কিছু আত্মীয়-স্বজনও সেভাবে হুঙ্কার দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ও সংশিষ্ট ওই সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবং নুসরাতের পরিবারকে ও আমাকে তারা ইশারা-ইঙ্গিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আজকে আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি এই মামলার শেষ পর্যন্ত আমি লড়বো। প্রয়োজনে আমারও মৃত্যু হবে নুসরাতের মতো। তারপরও কোনো আসামি বাঁচার সুযোগ নাই। ১৬ জনের মধ্যে ১৬ জনেরই ফাঁসি নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলোচিত মামলা হিসেবে তদন্ত ভার দিয়েছেন পিবিআইয়ের হাতে। তারা পুঙ্খানপুঙ্খরুপে তদন্ত কাজ শেষ করেছে। এছাড়া গোপনে অনেক সংস্থা এই মামলা তদন্ত করেছে। যে ১৬ জন চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এদেও বাঁচার কোনো সুযোগ নাই। নারী ও শিশু নির্যাতনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৪ ধারায় মামলাটি আনা হয়েছে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন। যেহেতু পুঙ্খানপুঙ্খরুপে তদন্ত করে পিবিআই অল্পসময়ে চৌকস অফিসার দ্বারা সচিত্র তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে আসামিরা যতই ছল চাতুরি করুক তাদের বাঁচার সুযোগ নাই। এই চার্জশিটে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানও একই অভিযোগ করেছেন।
বুধবার (২৯ মে) আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই’র ৮২২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এজহারনামীয় ৮জন, এজহার বহিভূত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ৮জন। আমরা সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি।
এই মামলাটি গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই মামলায় সর্বমোট ৯২ জন স্বাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন অন্যান্য হলেন বিশেষজ্ঞ, বাদি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিষ্টের স্বাক্ষী। মামলায় ৭ জন স্বাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।
১২জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপ ও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. গোলাম জিলাণী জানান, নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত অধ্যক্ষ এস.এম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নুসরাতের মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন