সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ২০ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের পাশে ইসলামাবাদ এলাকার বড়ছড়া সেতু ভেঙে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার দীর্ঘ ২০ ঘণ্টা পর সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেল যোগাযোগ ফের চালু হয়েছে।
দুর্ঘটনায় ট্রেনটির ১৭টি বগির মধ্যে ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে ব্রিজের নিচে ও রেললাইনের দু’পাশে পতিত হয়। এতে ৪ জন নিহত ও আহত হন অন্তত শতাধিক যাত্রী। এ ঘটনার পর থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনা কবলিত ৩টি বগি রেললাইনের পাশে রেখেই সোমবার রেল বিভাগের কর্মীরা উদ্ধার ও মেরামত কার্যক্রম শেষে ওই ব্রিজ ও রেললাইনটি ব্যবহারের উপযোগী করে তুলেন সন্ধ্যা ৭.১০টার দিকে। এরপর ওই রেলপথ ও ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রায়াল ট্রেন চলাচল করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়া রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ফের চালু করে। ঢাকা ও সিলেটগামী বেশ ককেটি ট্রেন সিলেট স্টেশনে অপেক্ষমান রয়েছে।
সোমবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন ট্রেনে ছেড়ে যাবার মাধ্যমে সারাদেশের সঙ্গে রেলযোগ পুনরায় চালু হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেলপথের বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান জাবিদ।
এর আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দুর্ঘটনার পর কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়।
বরমচালে রেললাইন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত সিলেটের সব ট্রেন কুলাউড়া থেকে চলাচল করবে বলে জানান সিলেটের সহকারী স্টেশন মাস্টার সজীব কুমার মালাকার।
শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার কবির আহমদ বলেন, গত রোববার দিনগত রাতের দুর্ঘটনার পর আখাউড়া জংশন স্টেশন থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন বরমচালে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। দুপুরে ঢাকাগামী উপবন ট্রেনটি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন নামে কুলাউড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।
এদিকে পারাবত এক্সপ্রেসের ৫টি বগি খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় সোমবার সকালে সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়। এছাড়া চট্ট্রগ্রামগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন,সিলেট থেকে আখাউড়াগামী কুশিয়ারা ট্রেন, রাত্রের ঢাকাগামী উপবন, সুরমা মেইলের যাত্রাও বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট স্টেশনের সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে আন্তঃনগরসহ ১১টি ট্রেন চলাচল করে। রেল দুর্ঘটনার পর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের সহকারী মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন মুঠোফোনে জানান, ‘কুলাউড়া স্টেশন থেকে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন শ্রীমঙ্গল থেকে সোমবার দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে ছেড়ে যায়। একই স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেন শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে বিকেল ৩টা ২৭ মিনিটে ছেড়ে যায়। কুলাউড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত ট্রেন বিকেল ৬টা ৩ মিনিটে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়া রাতে যদি লাইন ফিট হয় তাহলে রাতের চট্টগ্রামগামী উদয়ন ট্রেন চালানো হবে বলে জানান তিনি।
সাখাওয়াত বলেন, সোমবার ঢাকা থেকে দুপুর ১২টায় যাত্রা বাতিল করে সিলেটগামী জয়ন্তিকা ট্রেন। এ ট্রেন শ্রীমঙ্গলে বিকেল ৫টায় আসার কথা ছিল। কালনী ট্রেন সিলেট স্টেশন থেকে যাত্রা বাতিল করে। এ ট্রেন সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে আসার কথা ছিল। রাত্রের উপবন সিলেট থেকে যাত্রা বাতিল করে। এ ট্রেনটি রাত্র ১২টা ২০ মিনিটে সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে আসার কথা ছিল। সিলেট থেকে সুরমা মেইল রাত সাড়ে ১০টায় শ্রীমঙ্গলে আসার কথা। এটির যাত্রা বাতিল হয়। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী জালালাবাদ ট্রেন রাত্র ২টা ৩০ মিনিটে শ্রীমঙ্গলে আসার কথা ছিল। এ ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়।
সিলেট থেকে আখাউড়াগামী কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে আসার কথা। এটির যাত্রাও বাতিল করা হয় বলেও জানান তিনি।
সিলেটের সহকারী স্টেশন মাস্টার সজীব কুমার মালাকার বলেন, ভেঙে যাওয়া কালভার্ট মেরামতে রেলওয়ের প্রকৌশলী ও কর্মীরা কাজ করছেন। আজ রাতের মধ্যে কালভার্টটি মেরামত করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভেঙে যাওয়া কালভার্টটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। সিলেট-আখাউড়া রেলপথে মাত্র একটি ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্ট আছে। সেটি মাইজগাঁও ও ভাটেরা স্টেশনের মাঝামাঝিতে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন