জঙ্গিবাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছি : মনিরুল

জঙ্গিবাদকে বিশ্বের একটি বড় সংকট হিসেবে উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেকটাই সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে তৎপর জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অনেকটাই দুর্বল করে ফেলা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী এই সংকট নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সকলকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার তিন বছর উপলক্ষে নিহতদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। এসময় দুই ইউনিটের প্রধান এই দুই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছে র‍্যাব বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সারাবিশ্বেই জঙ্গিবাদ কার্যকর রয়েছে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি তরুণ বিপথগামী হচ্ছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর পুলিশদের (ইউরোপুল) তথ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই ইউরোপজুড়ে ১২৯টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বোঝা যায়, জঙ্গিরা বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়নি। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এর আগে র‌্যাবের ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হলি আর্টিজান বেকারির সামনে তৈরি মঞ্চে নিহতদের উদ্দেশে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

এদিকে হলি আর্টিসানে হামলার মতো ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেলক্ষ্যে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার স্থলে তৈরি বেদিতে পুষ্পস্তক অর্পণ ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আজকের এই দিনে তিন বছর আগে হলি আর্টিসানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়েছিল। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের পরিবার শোক কাটিয়ে উঠুক, সে কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, এই হামলার সঙ্গে যারা নব্য জেএমবি জড়িত ছিল, তারা সবাই নিহত হয়েছে। অনেকে অভিযানে নিহত ও জীবিত গ্রেফতার হয়। আমরা আশা করছি, দ্রুত বিচার কাজ শেষ হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নিহতের পরিবার তাদের অপূরণীয় ক্ষতির ক্ষেত্রে একটু হলেও মানসিক সান্ত্বনা পাবেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নাগরিক তথ্য সংগ্রহ, সরাসরি অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ ডিএমপির নানা উদ্যোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশে পরিণত হবে।

হলি আর্টিসানে হামলার পর তিন বছরে বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, হলি আর্টিসান হামলার পরপরই শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার চেষ্টা হয়। একই কায়দায় আরও কয়েকটি সহিংস ও নৃশংস হামলার পরিকল্পনা ছিল। তবে আমরা আমাদের ইনটেলিজেন্স তথ্যের মাধ্যমে, প্রি অ্যাক্টিভ অপারেশনের মাধ্যমে, প্রো অ্যাক্টিভ ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে, তাদের সে পরিকল্পনাগুলো নস্যাৎ করে দিয়েছি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদের যে সাংগঠনিক কাঠামো, তা আমরা বিভিন্ন অভিযানে ভেঙে দিয়েছি। তবে জঙ্গিদের আমরা দমন করতে পারলেও, জঙ্গিবাদ মতাদর্শে বিশ্বাস করে কিংবা উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তি এখনও সমাজে বিদ্যমান। তারা অনুকূল পরিবেশ পেলে কিংবা কখনও সক্ষমতা অর্জন করে, ওই মতাদর্শে বিশ্বাসীদের কারণে ঝুঁকি থাকবে। সেই ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে তাদের সক্ষমতার মাত্রার ওপর। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কখনও কখনও জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা যাতে না পারে সেজন্য আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মতবাদ ঠেকানো সম্ভব হবে।