ডেঙ্গু আতঙ্ক: ‘দরকার না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৭০০ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
সাধারণত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর এই প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর সরকারি- বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতাল।
এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, “খুব বেসামাল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে ডেঙ্গু নিয়ে যেহেতু আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তাই অনেকেই আছেন যাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নাই, কিন্তু তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে চাচ্ছেন।”
“আর ডাক্তারদের উপরও মানসিক একটা চাপ তৈরি হয়েছে, যার কারণে তারা রোগী ভর্তি করাতে বাধ্য হন।”
রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখেছেন বিবিসির প্রতিবেদক।
তিনি জানান, অনেক বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বাইরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সেখানে আর রোগী ভর্তি করা হবে না। ফলে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে।
মিস্টার আজাদ বলেন, “এ ধরণের কথা আমরা কিছুটা হলেও শুনেছি।”
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এবং বেসরকারি ক্লিনিক বণিক সমিতির প্রতিনিধিদের সাথে আজ বৈঠক করার কথা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
ওই বৈঠকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
এছাড়া আজ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০টি তদারকি টিম তৈরি করা হবে। যারা শুধু ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক পরিদর্শন করে খোঁজ নেবে যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব নির্দেশনা দিচ্ছে তা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি-না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এসব রোগীর প্রত্যেকের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দরকার। চিকিৎসক নার্স যারা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন তাদের উপর শারীরিক-মানসিক চাপও প্রচুর বেড়ে গেছে।”
‘এতো রোগী আসবে…আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না’
তবে সরকারি হাসপাতালের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। প্রায় সবাইকে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত বিছানা না থাকায় তাদের থাকতে হচ্ছে বারান্দা কিংবা মেঝেতে।
এক্ষেত্রে রোগীরা কেমন চিকিৎসা পাচ্ছে-এমন প্রশ্নে মিস্টার আজাদ জানান, “ঢাকা মেডিকেল কলেজে বাড়তি একটা জায়গার ব্যবস্থা করে অতিরিক্ত বিছানা দিয়ে সেখানে যাতে বেশি রোগী ভর্তি হতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।ৱ
“দ্বিতীয়ত, দুটি বড় হাসপাতালে এখনো তাদের আন্তঃবিভাগ বা ইনডোর চালু হয়নি। এই হাসপাতাল দুটিকে প্রস্তুত করে রাখা হবে। যাতে ডেঙ্গু রোগী আসা বেড়ে গেলে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম সেখান থেকে দিতে পারি।”
তিনি বলেন, “এতো রোগী আসবে তার জন্য আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। কাজেই কিছু রোগীকে বিছানা ছাড়াই চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ চিকিৎসা পাওয়াটাই বড় কথা। আর এটা সাথে অনেক রোগী থাকলে অনেক রোগীর প্রতিই মনোযোগ দিতে হবে।”
“হাসপাতালের অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের এই বিভাগে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এমনকি বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে যে, তাদের যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদেরকেও যাতে এই কাজে নামায়,” তিনি বলেন।
ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মিস্টার আজাদ বলেন, ওইখানে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের চিকিৎসার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বলে শুনেছি সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঢাকার মতো চিকিৎসা যাতে ঢাকার বাইরেও হয় তা নিশ্চিত করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ‘দুর্যোগ’ কাটিয়ে উঠবেন তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন