সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ১৩টি ‘ডেড স্পট’!
সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়ার ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথের পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। জোড়াতালি দিয়েই কোনোরকম চলছে ট্রেন। ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১৩টি সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের মতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পরই সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ রুটের ৯০ ভাগ সেতুর বয়সই ৭০ থেকে ১০০ বছর। রেলের তালিকায়ও এ ১৩টি স্পটকে ‘ডেড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৩টি সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, পরে ৫ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮টি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি সেতু ‘ডেড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত।
রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা বলছে, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে- শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নং সেতু এবং মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু। এ সেতুগুলো সংস্কারের কোনো প্রকল্প না থাকায় এখনই এগুলো সংস্কারের সম্ভাবনা নেই- বলছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্যমতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম পথে যাতায়াত করেন। এর আগে রেলকে যাত্রীরা নিরাপদ বাহন মনে করলেও বেশ কিছু দিন ধরেই যাত্রীরা সেটা মনে করছেন না। তারা উল্টো প্রশ্ন করছেন, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানান কারণে বারবার ট্রেন লাইনচ্যুতির পর এখন কি আর ট্রেনকে নিরাপদ বাহন বলা যায়?
কথা হয় কুলাউড়ার স্টেশন মাস্টার মো. মুহিব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবাই মনে করে স্টেশন মাস্টারই সব। প্রকৃতপক্ষে বেশ কয়েকটি প্রকৌশল বিভাগের ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা ট্রেন পরিচালনা করে থাকি। এখানে স্টেশন মাস্টারের করার কিছুই নেই। তবে সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে আগে ট্রেন চলত ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন সেই গতি অর্ধেকে অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
গত ২৩ জুন কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন বড়ছড়া এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন উপবন। এতে ৪ যাত্রী নিহত, দুই শতাধিক আহত এবং রেলের ক্ষতি হয় ২৮ কোটি টাকা। এর ১৫ দিনের মাথায় ৭ জুলাই গরুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন জয়ন্তিকার ইঞ্জিন বিকল হয় যায়। এর ৯ দিনের মাথায় ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন কালনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পর ছিঁড়ে যায় ব্রেকের তার। পরে জোড়াতালি দিয়ে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। এর দুই দিন পর ১৯ জুলাই দুপুরে কুলাউড়া আউটার সিগন্যালের কাছে লাইনচ্যুত হয় জয়ন্তিকা ট্রেনের বগি। পরদিন ২০ জুলাই শনিবার একই স্থানে সকাল ৭টায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনি ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। পরে লাইনচ্যুত বগি রেখেই কুলাউড়া ত্যাগ করে ট্রেনটি।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট-আখাউড়া রুটের রেলসেতু ও কালভার্টগুলোর অর্ধশত বছরের পুরনো কাঠের স্লিপারের অধিকাংশই নষ্ট, লাইনের ক্লিপ চুরি ও পাথর সরে যাওয়ার কারণেই রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ বগি ও ইঞ্জিন তো আছেই। রেলপথ নিয়মিত চেক করার মাধ্যমেই অনেক সময় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলেও সেই চেক করা হচ্ছে না।
কুলাউড়া রেলস্টেশন এলাকায় টানা দু’দিন ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়া প্রসঙ্গে এসএসআই সিগন্যাল মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হিলরুক ছুটে যাওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রেললাইনে নেই পর্যাপ্ত পাথর। সেতুগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। সমস্যার তুলনায় দুর্ঘটনা ঘটছে কমই।
অতিরিক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) আশরাফুল আলম জানান, আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। দ্রুতগতিতে রেলপথের মেরামত কাজ চলছে।
সম্প্রতি রেলপথ পরিদর্শন করে রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) মো. নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। তদন্ত কমিটি ভালো বলতে পারবে। আমি শুধু সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়ার রেলপথ পরিদর্শনে এসেছি। এখানকার ত্রুটিগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন