দেশে করোনা আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে দেশে ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ কমছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, যে হারে প্রতিদিন করোনার পরীক্ষা হচ্ছে তাতে করে সংক্রমণ বাড়ছে নাকি কমছে এটা বোঝার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং এসব বার্তা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দেবে, তাতে করে পলিসি তৈরি এবং সাধারণ মানুষ অসচেতন হবে, এতে করে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার দ্রুত কিছু উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়েছে। টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে শত শত চিকিৎসক অনলাইনে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কিছু কার্যকরী চিকিৎসা সেবা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, দেশে ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে।
একই কথা বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। গত ২৭ জুলাই অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালকের সঙ্গে উপস্থিত থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ কমতির দিকে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা এখন পিকে নাই, আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এর তথ্যও বলছে আমরা পিক টাইমে নেই।
দেশে ৩১ জুলাই করোনা শনাক্ত হয় দুই হাজার ৭৭২ জনের। রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২০। গত ২৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫টি। প্রায় দুই মাস পর সেদিন নমুনা সংগ্রহ ৯ হাজারের ঘরে নেমে আসে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যেতে থাকে শনাক্তের সংখ্যাও। গত ২৬ জুলাই করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৭৫ জন। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, ১ জুন শনাক্ত ছিল ২ হাজার ৩৮১ জন। এরপর সর্বনিম্ন শনাক্তের সংখ্যা পাওয়া যায় ১৯ জুলাই, এদিন করোনা শনাক্ত হয় ২ হাজার ৪৫৯ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের হিসাব অনুযায়ী রোগী কমছে। আগে যেখানে গড়ে তিন হাজারের ওপরে রোগী ছিল, সেটা এখন তিন হাজারের নিচে নেমেছে। তবে এই প্রতিবেদন দেশের করোনার যে সংক্রমণের চিত্র তাতে সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ।
তিনি বলেন, এটা যদি সত্যিকারের প্রতিফল হয় তাহলে কমছে, আর যদি সেটা না হয় তাহলে বলা যাবে না রোগী কমছে। তাই দেশের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা জানা জরুরি, তাই এই প্রতিবেদন যথেষ্ঠ নয়।
অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, এজন্য প্রতিটি রোগীর কন্টাক্ট ট্রেসিং দরকার, যেটা হচ্ছে না। যদি এটা না করা হয়, তাহলে শুধু এই প্রতিবেদন দিয়ে বলা কঠিন রোগী কমছে নাকি বাড়ছে।
এদিকে, সংক্রমণ ওঠা-নামা করছে মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যত নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সেটা ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশের ভেতরে ওঠা-নামা করছে। এটা খুবই আনস্টেবল, অস্থিতিশীল। গত তিন জুলাই থেকে পরীক্ষা কমে গেছে আর তাই সংক্রমণ কমে গেছে, তখন থেকেই কম টেস্ট হচ্ছে। তাই এর ওপরে আশ্বস্ত হতে পারি না। সংক্রমণের শতকরা হার ঘুরপাক খাচ্ছে। রোগী সংখ্যা বাড়তি-কমতি দুটোই দেখা যাচ্ছে, তবে এটা টেস্টের কারণে।
জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমছে এটা কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়। আমি মনে করি না তারা অ্যাপিডেমিওলজিক্যাল কোনও ভিত্তিতে এই মন্তব্য করেছেন। করোনার গতিপ্রকৃতি এখনও পরিষ্কারভাবে কেউ বুঝতে পারেনি। বিভিন্ন দেশে এটা বিভিন্নভাবে ভয়াবহতা বোঝাচ্ছে। এই ধরনের কথা মানুষকে ভুল বার্তা দেবে। মানুষ এখন এমনিতেই টেস্টের প্রতি অনিহা দেখাচ্ছে। এ ধরনের কথা বলা হলে আগ্রহ আরও কমবে। তাতে করে আরও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হবে।
মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, টেস্টই কম হচ্ছে, তাহলে সংক্রমণ বোঝা যাবে কী করে। একই হারে টেস্ট করে যদি রোগী কম শনাক্ত হয় তাহলেই কেবল এটা বলা সম্ভব। সংক্রমণ বেশি নাকি কম এটা এভাবে বলা যাবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন