রোহিঙ্গারা অনেকেই এখন ভাসানচর যেতে চায়

কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে বাঁশ আর তারপুলিন দিয়ে তৈরি ছাপড়া ঘর, অনিরাপদ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে ভাসানচরের পরিকল্পিত আবাসনে এসে স্বস্তি ও তৃপ্তির কথা জানিয়েছেন সদ্য আগত রোহিঙ্গারা।

স্থানান্তরের প্রথম ধাপে গত শুক্রবার কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে ও জাহাজে করে দুই দিনের দীর্ঘ যাত্রা শেষে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার প্রথম দলটি দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছের ১৩ হাজার একর আয়তনের দ্বীপ ভাসানচরে পৌঁছায়।

পৌঁছানোর পরই তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় সারি সারি লাল ছাউনির বাড়িগুলোতে; আর নতুন ঠিকানায় পৌঁছনো প্রায় সবারই চোখেমুখে দেখা গেল আনন্দের ছাপ।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্টে দেশের সীমান্ত দিয়ে আসতে থাকে। সেসময় তাদের ঠাঁই মিলেছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ায়। সে সময় তাদের দরকার ছিল জীবনের নিরাপত্তা, মাথা গোজার একটু ঠাঁই।

বাংলাদেশ তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়েছে। দিয়েছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশ্রয়। জোগান দিয়েছে অন্ন। তবে গেল চার বছরে নানা কারণেই বিষিয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প জীবন। নিজেদের মধ্যেই আর ভালো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারছে না তারা।

খুনোখুনি, ঝগড়া, মারামারি, মাদকের গ্রাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পে। সন্ত্রাসী মদত দিচ্ছে গুটি কয়েক রোহিঙ্গা। এখানে নেই কোনো স্কুল, চিকিৎসার সুব্যবস্থা। ফলে রোহিঙ্গা শিশুরা নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে। এতে করে তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তান জন্মদানের ফলে মৃত্যু ঘটেই চলেছে।

এসব অনেক কারণেই রোহিঙ্গাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসানচর। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভাসানচরে যেতে যান অনেক রোহিঙ্গা। তবে চূড়ান্তভাবে তাদের চাওয়া নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া। যে ব্যাপারে এখনো মিয়ানমারকে বাধ্য করতে পারেনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

এর পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাওয়া, দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজারকে হুমকি থেকে বাঁচানো। কেননা রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরির জন্য এরই মধ্যে উজাড় হয়েছে বনাঞ্চল, পাহাড়। যা সেখানকার জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলছে ব্যাপক হারে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গারা চলে গেলে একদিকে যেমন এই এলাকা রক্ষা পাবে, অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও পাবে বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ। স্থানীয় শরণার্থী বিষয়ক কমিশন জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।