নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে “বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা

আজ দেশের প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র্যাং কিং এ প্রথম স্থান অর্জনকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আজ “বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস ২০২০” উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল আলোচনা সভাটি সকাল ১১ টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয় এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

টিভি উপস্থাপক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগ এর পরিচালক জনাব জামিল আহমেদ এর সঞ্চালনায় এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ এর অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবী শহীদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী এবং এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন সভাপতি এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন বেনজীর আহমেদ।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আজকের বিজয় দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ একদিকে যেমন আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। আজ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি গুলো ধর্মকে অপব্যবহার করে সংঘটিত হয়েছে। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মতো সাহস দেখাচ্ছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য ভাস্কর্য নয়, ধর্মকে ব্যবহার করে ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন। আমরা যদি ইসলামিক দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই সব দেশেই নানা ভাস্কর্য রয়েছে। এই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আমাদের একটা মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ সকল অপশক্তি প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যেতে হবে। আজ দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং আমরা নিজেদের যে সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছি তা সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন বেনজীর আহমেদ বলেন, এদেশের মানুষ এবং বিশেষ করে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম আজকের দিনটি আমাদের স্বপ্ন পূরণের দিন। বঙ্গবন্ধুই এদেশের স্বাধীনতার রুপকার। তিনি ছিলেন এদেশের অসহায় নির্যাতিত মানুষের ভাগ্য উন্মোচনের ত্রাণকর্তা।এ সময় তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ এর ভাষণেই এদেশ পরিচালনার সব দিক নির্দেশনা বিদ্যমান ছিল এবং আজ এদেশের যত উন্নয়ন ও আগ্রগতি হচ্ছে তা সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, কিছু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ইসলামের অপব্যবহার করে ইসলামকে ছোট করছে এটি একটি সূক্ষ্ম রাজনীতি। জাতি হিসেবে আমরা উদার ও সহনশীল, আমরা ধর্মান্ধ না। আমরা জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি সেটিই আমাদের বাঙালির পরিচয়। যারা আমাদের জাতি পরিচয় কে আমাদের ধর্মীয় পরিচয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আমি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বলবো নিজের দুটো পরিচয়কেই এবং সর্বাঙ্গে মানুষ পরিচয় কে ছিনিয়ে আনার জন্য যে আদর্শিক যুদ্ধ তা তোমাদেরই করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন তিনি মানুষ, তিনি বাঙালি, তিনি মুসলমান। এই তিনটি পরিচয় এর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আজ আমরা যে মানুষ সেই পরিচয়কে ও সংকটে ফেলা হয় কারণ এটি একটি সূক্ষ্ম রাজনীতি, একটা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। আমরা সকলে আগে মানুষ, এই অপশক্তি ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ইসলামকে খাটো করছে। আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের এসকলকে এই অপশক্তিকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যদি আমরা বিজয় না পেতাম , তা হলে আজ আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে যে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছি তা কখনও ই সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের যেখানে সবাই এক সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বিশ্ব দরবারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রাজনীতির সাথে ধর্ম মিশালে তা একটি দেশের জন্য কখনও ই মঙ্গল বয়ে আনে না, আমাদের দেশে কিছু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাজনীতির সাথে ধর্ম এর অপব্যাখ্যা করে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেস্টা করছে আমাদের সবার উচিৎ হবে একত্রে তাদের প্রতিহত করা।

ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীবৃন্দ, গবেষক ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ সহ আরও অনেকে।