দেশে সম্ভাবনার নতুন দ্বার গেমিং ইন্ডাস্ট্রি
লুডু বাংলাদেশ তো বটেই গোটা উপমহাদেশে খুব পরিচিত একটি খেলা। বাড়ির সবাই মিলে লুডু খেলার দৃশ্য এ অঞ্চলের সংস্কৃতিতে বেশ পুরনো। এখানে ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে বন্ধুরাও যুক্ত হন অবসর উদযাপনে। কালের বিবর্তনে এই জায়গা দখল করেছে স্মার্ট ফোন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের বহু মানুষ মোবাইল গেম নিয়েই মেতে আছেন।
অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এই ধারা থেকে পিছিয়ে নেই। যুগের চাহিদায় সাড়া দিয়ে স্বল্প পরিসরে হলেও এ দেশেও তৈরী হচ্ছে মোবাইল গেমস। সেখানে যুক্ত হচ্ছেন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা অনেক তরুণও। দেশে অনেকটাই নতুন কিন্তু সম্ভাবনাময় এই খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ একদিকে যেমন বেকারত্ব ঘোঁচাতে পারে, অন্যদিকে অর্থনীতিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
এ জন্য সরকারি পর্যায়ে নীতি সহায়তার পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কারিকুলামে এই শিক্ষা যুক্ত করা যায় কি না তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী শর্মী জানান, আমার আগ্রহ ছিল গেম নিয়ে কাজ করার। কাজ শুরুও করেছি গেম ফার্মে। এছাড়া অন্যান্য কোম্পানিতে কাজ করেছি ডিজাইনার হিসেবে। কিন্তু গেমের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকায় পুনরায় গেমের জবে ফিরে আসা।
শুধু তিনি নন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল থেকে পাশ করে অনেক তরুণও যুক্ত হচ্ছেন গেম তৈরীতে।
কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে গত ক’বছর অনেক মেধাবী পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। তবে বাংলাদেশেেএখন বেশ কিছু কোম্পানি তো বটেই, ব্যক্তি উদ্যোগেও তৈরী হচ্ছে মোবাইল গেমস। সেটি ছাড়াও বিশ্বের নামকরা দু’একটি কোম্পানিও বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে।
উল্কা গেমস লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জামিলুর রশিদ জানান, দেশে আইটি সেক্টরে ভালো অ্যাওয়ারনেস তৈরি হয়েছে, কিন্তু গেমিংয়ে এখনো আলাদা করে গুরুত্ব আসেনি। আমরা যখনই কোনো কাজ করতে যাই, আইটির জন্যে যে বেনিফিটগুলো সরকার তৈরি করেছে সেখানে গেম অবশ্যই ভালো অবস্থানে থাকার কথা এবং পাইও। তবে গেমের জন্যে আলাদাভাবে অ্যাওয়ারনেসটা বাড়ানো উচিত।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে যে’কটি সেক্টর অবদান রাখে তার মধ্যে অন্যতম গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশের মতো ছোট আয়তনের দেশে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরীর বিকল্প নেই। গেম তৈরী হতে পারে একটি কার্যকরী শিল্প।
বেসিসের সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, বছরে প্রায় ২২ হাজার তরুণ-তরুণী কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এই রিলেটেড সাবজেক্টে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে। এই যে ২২ হাজার তরুণ-তরুণী তাদের কিন্তু ভালো নলেজ আছে কিন্তু দক্ষতা নেই। আমরা ইউজিসি’র সাথে বার বার বসেছি এবং বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, তাদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষাটা বাইরে না করে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এই সেক্টরকে সহায়তা করতে মন্ত্রণালয় সবসময় পাশে আছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, আমরা আপাতত আইসিটি মিনিস্ট্রি থেকে ইনোভেশন, ডিজাইন, আইডিয়া প্রোজেক্ট এবং আমাদের যে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানি সেই প্রকল্পগুলো থেকেই গেমিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সাপোর্ট দিচ্ছি। আমাদের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক সম্ভাবনাময় একটি ইন্ডাস্ট্রি। আমরা আশা করছি যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গেমিং ইন্ডাস্ট্রিকে রেভেনিউ আর্নিং সোর্স হিসেবে দাঁড় করাতে পারব।
দেশীয় উদ্যোক্তার পাশাপাশি বিদেশী বড় কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় সেজন্য উপযুক্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরীর দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন