কালের সাক্ষী কুমিল্লার মুরাদনগরের মেটংঘর দারিকসাহা জমিদার বাড়ি
কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানার ঐতিহ্য মেটংঘর জমিদার বাড়ি। স্থানীয় জনসাধারণ একে দারিকসাহার বাড়ি নামে চিনেন। বাড়িটি শতাব্দী প্রাচীন “কালের সাক্ষী” হয়ে মাথা উঁ^চু করে দাঁ^ড়িয়ে আছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসাহী জনসাধারণ বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। এ বাড়িটিকে কেন্দ্র করে জমিদারী পরিচালিত হতো। এখান থেকে খাজনা আদায়েরজন্য “গয়না” নৌকা ব্যবহার করা হতো। জনসাধারণ খাজনা হিসাবে প্রধান শস্য দিতেন। আদায়কৃত খাজনা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য চৈত্র মাসের শেষ দিন সূর্যাস্তের আগে জমিদারবাবু কুমিল্লা যেতেন। জমিদারী পরিচালনা করতেন দারিকসাহা। তাকে সাহায্য করতেন তার পিতা রাম কেশব সাহা।
বর্তমানে জমিদার বাড়ির দুরাবস্থা চলছে। জমিদারদের বংশধরগণ জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বসতভিটারও অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে এ বাড়ির সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ব্যক্তি হচ্ছেন শ্রীমতি চম্পক লতা রায় (৯৫)।
তিনি বলেন, “আমার দাদা শ্বশুর ছিলেন বড় জমিদার। এলাকার বহু লোকজন এবাড়িতে আসতেন। বাঙ্গরার রুপবাবুর বংশের লোকজনও এ বাড়িতে আসতেন। জমিদারদের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল অনেক বেশি। সবাই তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। ”জমিদারদের উত্তররসূরী দয়ালসাহ ( ৮১ ) বর্তমানে ঢাকা বসবাস করছেন। তিনি বলেন,“ চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর গ্রামের জায়গা- জমি বিক্রি করে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসি। এখন ছেলের সাথে কোন রকমে শেষ বয়সটা কাটিয়ে যাচ্ছি। আমার বাবা দারিকসাহা বৃটিশ শাসনামলে জমিদারী লাভ করেন। আইয়ুব খানের আমলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত আমাদের জমিদারী বিদ্যমান ছিল। ”
জমিদারগণ এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণে সহযোগীতা করেন। বিভিন্ন জনহিতকর কাঝে জমি দান করেন। এর মধ্যে মন্দিরের নাম বিমেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মন্দিরের পাশে রামকেশব সাহের সমাধি সম্বলিত একটি মঠ রয়েছে। এখানে জমিদারগণ ৩০ শতক জমি দেবোত্তর সমপ্তি হিসাবে দান করেন। মন্দিরটি জমিদার বাড়ির একটু পূর্ব দিকে অবস্থিত।
মেটংঘর জমিদার বাড়ির সাথে সবচেয়ে পরিচিত নাম দারকানাথ সাহা। এবংশের বংশ তালিকার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, বাঙ্গরা থানার অন্যতম এ জমিদার বাড়িটির সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন রাম কেশব সাহা। রাম কেশব সাহার ৩ ছেলে ছিল। তারা হচ্ছেন দারকানাথ সাহা, বৃন্দাবন সাহা ও মতুয়ুর সাহা। মতুয়ুর সাহা ছিলেন কনিষ্ঠ পুত্র। তার ছেলে কুডু সাহা, টিপু সাহা, গেদু সাহা এবং মেয়ে দুজন ছিলেন আশালতা রায় ও উষা রায়। তারা জমিদারী পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পর এ পরিবারটি ভারতের অগড়তলা চলে যায়। মধ্যম সন্তান বৃন্দাবন সাহা এর ছেলে ছিল ৪ জন। এ পরিবারটি এখনও জমিদার বাড়িতে বসবাস করছে। চার ছেলের মধ্যে বেনীমাধব সাহার স্ত্রী চম্পক লতা বেচে আছেন। তার অন্য ভাইরা হচ্ছেন বীরেন্দ্র, অনাথ, ও সুরেন্দ্র। বেনী মধাব ও চার ছেলে দরিদ্র অবস্থায় বর্তমানে মেটংঘরে রয়েছে। এর মধ্যে চন্দন রায়, কাজল রায়, সজল রায় স্বপন রায় জমিদার বাড়িতে রয়েছেন।দারিকসাহার এক ছেলে বিপদসাহা বর্তমানে মুসলমান হয়ে জাকির হোসেন নাম ধারণ করে মেটংঘর বসবাস করছেন। তবে জমিদার বাড়ির অধিকাংশ সম্পত্তি ভোগ করছেন শ্যামল ডাক্তার ও তার ভাই নির্মল চন্দ্র দেবনাথ।
জমিদার বাড়িতে আাগে বহু অনুষ্ঠান হতো।বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব রাতব্যাপী চলতো। এসময় গান- বজনা হতো এবং বহু দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন উপস্থিত হতো। এখন সবই ইতিহাস। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। প্রধান বিল্ডিংি এর পেছনের দিকের দেয়ালে বটগাছের ছোট চাড়া গজিয়েছে। দেয়ালগুলো যেন বুঝতে পারছে জমিদার বাবু বেঁচে নেই।
বর্তমানে প্রতিবছর এখানে একটি বার্ষিক সঙ্গীতানুষ্টান এর আয়োজন করা হয়। জমিদার বাড়িতে বর্তমানে ক্রয় সূত্রে বসবাস করছেন “দয়াময় স্বর্ণ শিল্পালয়” এর প্রোপরাইটার শ্রী নির্মল চন্দ্র দেবনাথ।
তিনি জানান, ডা. শচিন্দ্র দেবনাথ এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৪ ভাদ্র এখানে রাতের বেলা অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে বহু ভক্ত শ্রোতা অংশগ্রহণ করেন। ্এখোনে মূলত “মলাই সঙ্গীত ” গাওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সময় নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া থেকে বিশিষ্ট সাধক মনমোহন সাহা এর ছেলের ঘরের নাতি ও নাতবউ অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রায় ৩ হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন