গণপরিবহন বন্ধ, তাতে কী? মাইক্রো, এ্যামবুলেন্সে ঢাকায় যাচ্ছেন যাত্রীরা

লকডাউনে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ, তাতে কী? মাইক্রো, এ্যামবুলেন্স আছে তো।

চলমান লকডাউনে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সাতক্ষীরা থেকে ঈদের পরে ঢাকামুখি জনস্রোত চলেছে মাইক্রোবাস আর এ্যামবুলেন্স যোগে। রীতিমতো লাইন পড়ে যাচ্ছে মাইক্রোবাস ও এ্যামবুলেন্সে যাত্রী উঠতে। একই সাথে লাইন পড়ছে ওই সকল গাড়ি গুলোরও। ঈদের পরদিন থেকে প্রতিদিন এ দৃশ্য চোখে পড়ছে।

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত বছরের মতো দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সরকার ‘কঠোর লকডাউন’ দিয়েছিলো ঈদের বেশ আগেই। তবে ঈদের সময় সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্ত:জেলা ও আন্ত:সিটি গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। যদিও সেসকল বাসে সাধারণত বিন্দুমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত দূরপাল্লার গণপবিরহন যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে বন্ধ রয়েছে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার পরিবহনগুলো। তাতে কী? বিকল্প ভাবে, ভেঙ্গে ভেঙ্গে নানান যানবাহনে ঈদের আগেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছিলেন এখানকার মানুষ, যারা ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র থাকেন। এবার ফেরার পালা। ঢাকামুখি সেই জনস্রোত। ঢাকার দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় ফিরছেন তারা। শুধু মাইক্রোবাস-ই নয়, এতে যোগ হয়েছে এ্যামবুলেন্সও। পরিবহনের কাউন্টার থেকে রীতিমতো টিকিট বিক্রি করেই যাতায়াতের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। জনপ্রতি ১৫’শত থেকে ২হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। আর ১০ থেকে ১৮ সিটের মাইক্রোবাসকে দেয়া হচ্ছে ১০হাজার থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন বহু সংখ্যক মাইক্রোবাস ও এ্যামবুলেন্স যাতায়াত করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সকাল ও সন্ধ্যায় পরিবহন কাউন্টার গুলোর সামনে ওই সকল গাড়ি আর যাত্রীদের ভিড়ে রীতিমতো হাট বসছে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে।

কলারোয়া উপজেলা মোড়স্থ পরিবহন কাউন্টার এলাকা থেকে মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় যাওয়ার প্রাক্কালে আব্দুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘চাকরী বাঁচাতে ঢাকা ফিরতেই হবে। ১৮’শত টাকায় টিকিট নিয়ে মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় যাচ্ছি।’

আরেক যাত্রী জানান, তার কাছ থেকে ১৬’শত টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছে।

মাইক্রোবাসের এক ড্রাইভার জানান, ‘সিট ক্যাপাসিটি ও গাড়ির ধরণ অনুপাতে আমাদের গাড়ি ভাড়া করছেন পরিবহন কাউন্টারের ব্যক্তিরা। গত কয়েকদিন ধরে আমরা এখান থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌছে আবার সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে সাতক্ষীরা আসছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ‘কী করবো বলুন? আন্ত:জেলা বাস চলাচল করছে আর আমাদের পরিবহন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদেরও তো চলতে হবে। যাত্রীদেরও যেভাবে হোক যেতে হবে। আমরা বাধ্য হয়ে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নিয়ে মাইক্রোবাস চুক্তিতে ঢাকায় যাতায়াত করাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা সত্য যে, পরিবহন চলাচল করলে যাত্রীপ্রতি আমরা যে কমিশন পেতাম তারচেয়ে এখন মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাওয়া যাত্রীপ্রতি ২’শত থেকে ৮’শত টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে। তবে এটা তো স্থায়ী নয়, ক্ষনিকের জন্য। ঈদের টান কেটে যাচ্ছে, আর ২/৩দিন গেলেই এচিত্র আর থাকবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিঁনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে কিছু এ্যামবুলেন্সের ড্রাইভার যাত্রী নিয়ে গেছেন। আবার কিছু প্রাইভেটকারের ড্রাইভারও এরূপভাবে যাত্রী বহন করছেন। এমনকি মোটরসাইকেল ভাড়া করেও যাত্রী বহন করা হয়েছে।’

এদিকে, দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, কাউন্টার ম্যানেজারসহ এই সেক্টর সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ‘গত বছরের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে ঢাকার পরিবহন চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসা, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তবু গণপরিবহন চালু করা হোক।’

একই কথা বলছেন সাধারণ যাত্রীরাও।
তারা বলেন, ‘নামেই লকডাউন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে কোন কিছুই বন্ধ নেই, থেমে নেই। যাতায়াত চলছে, দোকানপাট খুলছে, চাকরী-ব্যবসা চলছে। সবই চলছে, সবই হচ্ছে। শুধু হরকত বেড়েছে। আন্ত:জেলা গণপরিবহন চলছে আবার দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ আছে। আন্ত:জেলার পরিবহন বা অন্য যানবাহন যোগেই তো ঢাকা যাওয়া যাচ্ছে। তাহলে ঢাকার পরিবহন বন্ধ রেখে যাতায়াত বন্ধ করা তো যাচ্ছে না? তাই সীমিত আকারে হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো চালু করা উচিৎ।’