স্বপ্নের ঠিকানা পেলেন শেরপুরের ৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া)
আবেগ, ভালোবাসা আর বুকভরা আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে নিজের নতুন ঘরে উঠলো শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের ৪০ জন। এখন বাসস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার দাবী তাদের। পিছিয়ে পড়া জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠা এই মানুষগুলো নিজের ঘরে উঠতে পেরে তাদের আবেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সরকার প্রধানসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, জনউদ্যোগসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ভালোভাবে আবাসন প্রকল্পে বাস করতে স্থানীয়দের কাছে সকল সহযোগিতা চান।
ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজী ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন এখন শেরপুরে বসবাসরত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষের। কম্পিউটার, সেলাই, পার্লারের কাজসহ নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতে চান তারা। মূল জনশক্তিতে এগিয়ে আসার জন্য তাদের আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ আবাসন প্রকল্প। এই আবাসন প্রকল্পে ৪০ জনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন ঘরের চাবি। সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর সরকারি খাসজমিতে নির্মিত হয়েছে এই স্বপ্নের ঠিকানা।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, দুই একর জায়গায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারি হিজড়াদের আয় বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের জন্য থাকছে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর, শাক-সবজি, ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গা, আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। গুচ্ছ গ্রামের সাথেই রয়েছে ৮ একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। গুচ্ছগ্রামে নির্মিত প্রতিটি ঘরের সাথেই রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা।
এদিকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে এখানকার তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য হাড়ি-পাতিল, থাকার জন্য ২০টি বিছানা ও বিছানার চাদরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার গুচ্ছ গ্রামের মাধ্যমে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একইসাথে তারা হিজড়াদের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য জন উদ্যোগ শেরপুর কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, গুচ্ছ গ্রামের মাধ্যমে আমাদের বাসস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এখন আমাদের কর্মসংস্থানের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাই না, চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতে চাইনা। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। কর্ম করে খেতে চাই।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা এই কাজটি শেষ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা চাই তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো আমাদের সাথে বাস করে আমাদের জনশক্তিতে রুপান্তরিত হোক। কেবল জমিসহ ঘরই নয়, ওই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ও অপাংক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। যাতে তারাও সমাজের মূলস্রোতে একিভূত হতে পারে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, আমাদের সমাজে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোরও আছে। তারা আমাদেরই স্বজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে আন্তরিক থেকে আমাদের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের বাসস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টাও আমরা করছি। আশাকরি তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপসচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ, শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন, শেরপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব হাকিম বাবুল, সিনিয়র সাংবাদিক সুশীল মালাকার, দেবাশীষ শাহা রায়, দেবাশীষ ভট্টাচার্য, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জল, কামারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খবির উদ্দিন, সহকারি ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা হুরমুজ আলীসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন