ম্যারাডোনা-পেলে-মেসি কেউই জেতেননি কোপা!
শিরোনাম দেখে চমকে উঠতে পারেন। তালিকার নামগুলোর বিশ্বজয়ীদের। অথচ ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা পেলে, আর্জেন্টাইন দিয়েগো ম্যারাডোনা হয়ে হালের লিওনেল মেসি-নেইমার, কারো হাতেই ওঠে নি কোপা আমেরিকা ট্রফি! বিস্ময়কর হলেও এটিই সত্য।
পেলে-ম্যারাডোনা-মেসি তিনজনকেই রাখা হয় সর্বকালের সেরাদের তালিকায়। তাদের মধ্যে কে এগিয়ে এ নিয়েও আলোচনা কম হয় না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বিবেচনায় অবশ্য এগিয়ে থাকেন পেলে। দেশের হয়ে ৩টি বিশ্বকাপ আছে তার অর্জনের ঝুলিতে। প্রীতি ম্যাচ সহ সবমিলিয়ে ১ হাজার গোল করা প্রথম ফুটবলারও তিনি। দক্ষতা আর অসাধারণ গোলক্ষুধা দিয়ে পুরো ফুটবলবিশ্ব শাসন করেছেন তিনি। অথচ সেই পেলের হাতে নেই একটি কোপা আমেরিকা ট্রফি!
পেলে তার পুরো ক্যারিয়ারে একবারই খেলেছেন কোপা টুর্নামেন্ট। ১৯৫৯ সালের সেই আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে করেন ৮ গোল। ফাইনাল ম্যাচেও গোল করেন পেলে। তবে ম্যাচ ১-১ ড্র হওয়ার পর, আসরজুড়ে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। এভাবে জাতীয় দলের হয়ে কোপা বঞ্চিত হন তিনি।
পেলের পাশাপাশি ম্যারাডোনাকেও ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এককভাবে দেশকে ফুটবল বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন তিনি। পৃথিবীর যে কোন দলের ডিফেন্সকে ভেঙেচুরে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার, গোল করার সামর্থ্য ছিলো তার। তবে এমন একজন ফুটবলার কখনো জিততে পারেন নি কোপা আমেরিকার শিরোপা।
১৯৭৯ সালের কোপায় আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দেন ম্যারাডোনা। তবে গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে তার দল। মাত্র ১টি গোল করতে সক্ষম হন দিয়েগো।
১৯৮৩ সালের কোপা আমেরিকার সময় ইনজুরিতে পড়েন তিনি। সেবারও গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৭ সালে গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত সূচনা পেলেও, সেমিফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে বাদ পড়ে ম্যারাডোনার দল। সেবার ৩ গোল করেন ম্যারাডোনা।
১৯৮৯ সালে আরো একবার দলের হয়ে কোপায় খেলতে যান ম্যারাডোনা। সেবার শিরোপার দারুণ আশা জাগালেও, ফাইনাল রাউন্ডে জিততে পারে নি তারা। চ্যাম্পিয়ন হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল।
১৯৯১ সালে কোপা চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। তবে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় খেলতে পারেন নি ম্যারাডোনা। পরের আসরেও দলের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন তিনি। সেবারও চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। এভাবেই মহাদেশীয় এই আসরের শিরোপাটা কখনো ছুঁয়ে দেখা হয় নি দিয়েগো ম্যারাডোনার।
ফুটবলার হিসেবে এককভাবে যা যা জেতা যায়, তার সবই জিতেছেন লিওনেল মেসি। কোন তর্ক ছাড়াই সময়ের সেরা ফুটবলার ধরা হয় তাকে। অনেকের মতে, সর্বকালের সেরাও তিনি। তবে তার সব অর্জনই ক্লাবের হয়ে। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত কোন ট্রফি জেতা হয়নি লিওর।
অথচ দেশের হয়ে অনেকবার ট্রফি জেতার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। ’১৪ থেকে ‘১৬, ৩ বছরে পরপর ৩টি মেগা ইভেন্টের ফাইনাল খেলেছেন মেসি। বিশ্বকাপের ফাইনালে যেমন ব্যর্থ, তেমনি কোপায়ও। এই কোপার ফাইনালই খেলেছেন ৩ বার। ২০০৭, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ৩ বার কোপার ফাইনালে উঠেও একবারও শিরোপা উঁচিয়ে ধরা হয় নি তার। আরো একবার নিজের অনন্ত আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
হালের ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমারও কখনো স্বাদ পান নি কোপা শিরোপার। গত আসরে তার দল চ্যাম্পিয়ন হলেও, ইনজুরির কারণে সেবার খেলা হয় নি তার। এবার তিনিও দাঁড়িয়ে ট্রফির সামনে।
পেলে-ম্যারাডোনা-মেসি-নেইমারের এই তালিকা থেকে কাল কাটা যাবে যে কোন একজনের নাম। এই তালিকা থেকে নাম কাটানোর কথা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতেন না মেসি-নেইমার, যদি না তালিকাটা হতো হতাশার-আক্ষেপের-না পাওয়ার! কার নাম বাদ পড়বে, মেসি নাকি নেইমারের? দেখা যাবে কাল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন