যশোরের বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬২৪৫ কোটি
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছে চার হাজার ১৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল তিন হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ১৭৯.৬৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেশি আদায় হয়েছিল ৪৫.৪০ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে ২০১৬-১৭ অর্থবছর ছাড়া সবগুলোতেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল।
চলতি অর্থবছরে এত বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। তারা বলছেন, রাজস্ব আদায়ে যদি সফল হতে হয় তাহলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনও এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এই পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বার বার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে। এছাড়া রাজস্ব আদায়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো জায়গা সঙ্কট ও দুর্নীতি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, চলতি অর্থবছরে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, একদিকে করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ রয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। তবে কাঙ্খিত উন্নয়ন হলে এই বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত। কারণ কাস্টমস ও বন্দরের নানান অব্যবস্থাপনায় আমদানি কমেছে। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি আরও জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়েছেন। বন্দরে চাহিদা অনুযায়ী জায়গা না থাকায় পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায় ধসের এটিও একটি বড় কারণ বলে মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমাসের্র চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সে পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান। তাই ব্যবসায়ীরা দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আবার ফিরবেন।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পণ্যাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যাগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের অনেকটা উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আরও জমি অধিগ্রহণ ও পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। যেসব পণ্যে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সেসব পণ্য আলাদা নিরাপদ জায়গায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদার কথা ভেবে আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বন্দরে বাণিজ্যে আরও গতি বাড়বে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন