কুড়িগ্রাম বিআরটিএ দালালদের স্বর্গরাজ্য

সারাদেশে বিআরটিএ অফিসগুলোতে যখন দালালমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের অভিযান চলছে তখন কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস দালালদের স্বর্গরাজ্যে যেন পরিণত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট সার্কেল বিআরটিএ অফিসে মোটরযান পরিদর্শক ছাড়াও পাঁচজন রাজস্ব স্টাফ থাকলেও বিআরটিএ অফিস চলছে মূলত মোটরযান পরিদর্শক মোঃ মাহবুবার রহমানকে দিয়ে। মোটরযান পরিদর্শক কাউকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে, তার ছত্রছায়ায় রেখেছেন ১০ জনের অধিক একটি দালাল চক্র।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এই দালালচক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী এলাকার আশরাফ আলী। তিনি নিজস্ব প্রাইভেটকারে চড়ে অফিসে আসেন এবং সরকারি চেয়ার টেবিল ব্যবহার করে মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার, গাড়ীর ফিটনেস, পারমিট, হেভি ড্রাইভিং লাইসেন্স, নতুন মোটর সাইকেলের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজ করে প্রকাশ্যে টাকা পয়সা লেনদেন করেন। আশরাফ আলীর সাথে কথা বলে কারো অনুমান করার সাধ্য নেই যে, তিনি ঐ অফিসের কোন স্টাফ নন। আশরাফ আলীর মতো আরো রয়েছেন লম্বু কাজল, মহুবর, সুলতান, বাবলু, সাদেকুর, সবুজ, সুমন, রাজু (ইন্স্যুরেন্স) প্রমুখ।

মোটরযান পরিদর্শকের নেতৃত্বে এই দালালচক্র প্রতি মাসে বিভিন্নভাবে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ টাকার অবৈধ বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে এক বা দুইবার কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা হয়ে থাকে। হাজার হাজার লার্নার পরীক্ষার্থী থাকলেও, শুধুমাত্র তারাই পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেন বা রোল নম্বর পান, যারা টাকা পয়সা লেনদেন করেন। টাকা পয়সা লেনদেন হলে অনেকে পরীক্ষার হলে না গিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাস করে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ অফিসের অনেকেই জানান নতুন মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দিতে হয় মোটরযান পরিদর্শককে। মাইক্রোবাস, মিনিবাস, নাইট কোচ, গাড়ীর ফিটনেস পরিদর্শন না করেই পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। দালাল আশরাফকে সাড়ে আট হাজার টাকা দিলে সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে অরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। আর যদি কেউ নিজেই ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চান তাহলে তিন বছরেও লাইসেন্স পাবেন না বলে আশরাফ জানান। কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস দালাল চক্র বেস্টিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের যানবাহনের মালিকেরা নানা ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

মোঃ রফিকুল ইসলাম নামক একজন ভুক্তভোগী জানান, ২০১৮ইং সালের ১৮ই জুন তার মোটর সাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে তিনি ১৪/০৬/২০১৮ইং তারিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সরকারি কোষাগারে ২৪২৯/- টাকা জমা করেন ও অতিরিক্ত ফি প্রদান করে অফিসে ছবি তোলেন। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ৩০/১২/২০২০ইং তারিখে দেয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি লাইসেন্স পাননি।

আর এক ভুক্তভোগী শ্রী ভক্ত কুমার জানান, তিনি তিনবছর আগে একটি টিভিএস মোটর সাইকেল ক্রয় করেছেন এবং এই মোটর সাইকেলটির লাইসেন্স করার জন্য অফিসে গেলে তার কাছে তিনবছরের জরিমানা বাবদ তিনহাজার টাকা অতিরিক্ত দাবি করায় তিনি লাইসেন্সটি করতে পাচ্ছেন না। মোটরযান অধ্যাদেশে বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে মোবাইলে কথা হলে মোটরযান পরিদর্শক মাহবুবার রহমান জানান অতিরিক্ত টাকা আমরা নেই না। তিনি দালাল চক্রের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করে বলেন তারা আমাদের রাজস্বের কোন স্টাফ নন। আশরাফ নামে কাউকে চেনেন না এবং তার অফিসে সরকারি স্টাফ ছাড়া আর কোন দালাল নেই। এ বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

সব মিলে বিআরটিএ অফিসের দালাল চক্রের দাপটে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন যান বাহনের মালিকগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। দ্রুত কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস দুর্নীতি এবং দালালমুক্ত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে জেলাবাসী।