পাবনার সুজানগরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার!
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার কথা থাকলেও পাবনার সুজানগর মহিলা ডিগ্রি কলেজসহ উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রæয়ারিতে আয়োজন হয় না কোনো অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজ সুজানগর মহিলা ডিগ্রি কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। একুশে ফেব্রæয়ারিতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারলেও এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
ওই কলেজের শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার বলেন, ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি, বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় সেই শহীদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারছি না। ২১ ফেব্রæয়ারির আগে আমরা কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী করছি।
সালমা খাতুন নামে আরেক এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে শহীদ মিনার নেই, তাই ফুল দিতে পারি না।
কলেজের শিক্ষক জাহিদুল হাসান বলেন, অন্য সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে, তারা ২১ ফেব্রæয়ারি পালন করে। আমাদের কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় দিনটি পালন করতে পারি না। আমাদের অনেক দূর হেঁটে উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, ১৯৯৮ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এমপিওভুক্ত হয় ২০০৪ সালে। বর্তমানে চার শতাধিক শিক্ষার্থী এই কলেজে পড়াশুনা করলেও এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। ফলে ২১ ফেব্রæয়ারি আসলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা দিনটি যথাযথভাবে পালন করতে পারি না।
গত কয়েক বছর আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করেনি। শুধু সুজানগর মহিলা ডিগ্রি কলেজেই নয়, উপজেলার নাজিরগঞ্জ সাহিদা জলিল টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিএম কলেজেও নেই শহীদ মিনার।
র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল জলিল মন্ডলের স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার।
ওই কলেজের অধ্যক্ষ এস এম তফিজ উদ্দিন বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় কলেজটির শিক্ষার্থীরা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারছে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরেও সুজানগরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জাকর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিল, সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা ও কলেজ মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৭টি। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন