নওগাঁয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া টেন্ডারে (দরপত্র) বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের গাছ কেটেছে একটি চক্র। ঘটনায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে স্বাক্ষর নকল করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভুয়া টেন্ডারের কাগজ সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাউবোর অধীনে আত্রাই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের জেলার পতœীতলা উপজেলা থেকে মহাদেবপুর বাঁধের রাস্তা মেরামতের জন্য উজিরপুর সুইচগেট সংলগ্ন স্থানে গাছ অপসারণ প্রয়োজন। সে লক্ষে বাঁধে থাকা আটটি মেহগনি ও চারটি আম গাছ নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহŸান করা হয়। দাখিলকৃত দরপত্রের মধ্য থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারে মেসার্স নাইম ট্রেডার্স মো. নাজমুল হককে মনোনিত করা হয়। যেখানে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর সমুদয় টাকা জমা দিতে বলা হয়।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর ওই টেন্ডারে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান স্বাক্ষরিত ১১৮৭ স্মারকে দপ্তারাদেশ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে পাউবো’তে ওই নম্বরে কোন স্মারক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মেসার্স নাইম ট্রেডাসেরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গাছ কাটার সময় স্থানীয় জনগণ বাধা দিলে চক্রটি পাউবোর ভুয়া দপ্তরাদেশ দেখায়। বিষয়টি জানার পর পাউবো অফিস থেকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে গাছ কাটার সাথে জড়িত পতœীতলা উপজেলার কাঞ্চন গ্রামের মন্টু,ও নজিপুরের অরুণ, মহাদেবপুর উপজেলার মৈনগর গ্রামের আতোয়ার এবং মান্দা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আজাহার আলী রাজা নামে ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা পায়। প্রত্যক্ষদর্শী উজিরপুর গ্রামের সুধাংশু কুমার সাহা ও রনজিত কর্মকার বলেন, ‘গাছ কাটার সময় আমরা বাঁধা দিলে গাছ কাটার লোকজন গাছ কাটার আদেশের কাগজপত্র দেখায়। পরে শুনি ওই কাগজটি ভূয়া ছিল। ভুয়া কাগজ দিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গাছ কাটার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কোন অগ্রগতি দেখছিনা।’

গাছ ব্যবসায়ী আতোয়ার বলেন,‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাগজপত্র দেখিয়ে মন্টু ও অরুণ গাছ বিক্রি করে মহাজন রাজার কাছে। রাজার সঙ্গে আমার ২০ বছর ধরে সম্পর্ক। ব্যবসার সুবাদে তাকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে দেই।’ গাছ ব্যবসায়ী আজাহার আলী রাজা বলেন, ‘আমার জানামতে মন্টু ও অরুণ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কিনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে আমি ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে গাছগুলো কিনে নিই। ভুয়া টেন্ডারের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ভুয়া টেন্ডার হতো তাহলে আমি গাছ কিনতাম না। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মন্টু বলেন, ‘আমি বনবিভাগের উপকারভোগীর একজন সদস্য। বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গাছগুলো সরাতে বলা হয়। পরে বনবিভাগে আলোচনা করে গাছ নাম্বারিং করা হয়। আমরা বাঁধে যেসব গাছ লাগিয়েছিলাম সেগুলো কেটেছি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যাদেশ/দপ্তরাদেশের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের রাজস্ব সার্ভেয়ার মহসিন রেজা বলেন, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আতোয়ার নামে একজনের নাম আসে। তিনি গাছের ব্যবসা করেন। তার কাছে শুনেছি গাছগুলো ৪ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গাছ কিনেছেন মান্দা উপজেলার সতিহাটের রাজা নামে এক ব্যবসাীয়।

মুঠোফোনে রাজার কাছে জানতে চাইলে কার কাছ থেকে কিভাবে কিনেছেন তা বলছেন না। তবে যারা এ কাজ করেছে খুবই চতুর প্রকৃতির। আমাদের দপ্তরাদেশ তারা বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করে সেই অনুকুলে ভূয়া টেন্ডারের (দরপত্র) কাগজ তৈরি করে ধোঁকা দিয়েছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি দেখছিনা। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান বলেন, ‘গাছ কাটার ২-৩ দিন পর বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে পতœীতলা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আমার স্বাক্ষর নকল করে এমন টা করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার অফিসের কেউ জড়িত আছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে।

পত্মীতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, সরকারি গাছ কাটার বিষয় নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তদন্তও চলছে এ বিষয়ে আমার বেশি কিছু জানা নেই।পতœীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ নওগাঁ আদলতে সাক্ষ্য প্রদান করতে যাওয়া ,ও ফোনে না পাওয়ার জন্য বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।