খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, ২টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে অবশেষে হাইকোটের নির্দেশে বিভিন্ন ইটভাটায় প্রথমবারের মতো অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন। পাহাড়ে বায়ু দূষণ রোধে হিউম্যান রাইডস্ এবং পিস ফর বাংলাদেশ এর দায়ের করা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট মামলা নং- ১২০৪/২০২২ এর আলোকে রামগড় উপজেলায় স্থাপিত ৯টি ইট ভাটার মধ্যে ৭টির স্থগিতাদেশসহ অবশিষ্ট ২টি ভাটাকে শুক্রবার(২২শে এপ্রিল) সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

হাইকোর্টের নির্দেশিত পার্বত্য খাগড়াছড়ির রামগড়ের প্রত্যন্ত এলাকা দাতারাম পাড়া এলাকায় জনতা ব্রিকস ও মেঘনা-২ ইটভাটা দুইটির সকল কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করাসহ চিমনি ও চুলি­ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার দুপুরের দিকে এ অভিযান চালিয়ে এ ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানকালে রামগড় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ও মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে পরিবেশ অধিদপ্তর এর সহকারী পরিচালক মো: আশরাফ উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সহযোগিতায় ইট প্রস্তুুত কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রপাতি অকেজো করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। একই সাথে পানি দিয়ে ভাটা ধ্বংস করা হয়।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, ‘হাইকোটের নির্দেশে রামগড়ের দাতারাম পাড়া এলাকায় জনতা ব্রিকস ও মেঘনা-২ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হলো। এ সময় তিনি ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বলেন, নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইঠভাটা চালু করার চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, রামগড় উপজেলার অপর ৭টি ইটের ভাটার ব্যাপারে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় এগুলোর ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত কোন ব্যবস্থা নেননি।
মাটিরাঙ্গা:
অবশেষে হাইকোটের নির্দেশে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার হাতিয়াপাড়া এলাকায় বিআরএস নামক অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার(২২শে এপ্রিল) দুপুরের দিকে এ অভিযান চালিয়ে ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মিজ তৃলা দেব এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানকালে মাটিরাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ও মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সহযোগিতায় ইট প্রস্তুুত কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রপাতি অকেজো করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। একই সাথে পানি দিয়ে ভাটা ধ্বংস করা হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মিজ তৃলা দেব বলেন, ‘হাইকোটের নির্দেশে মাটিরাঙ্গার হাতিয়া পাড়া এলাকায় বিআরএস ইট ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হলো। এর আগে আরেকটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বলেন, নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইঠভাটা চালু করার চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে মহালছড়ি ও গুইমারায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম অবৈধ ভাবে পরিচালিত এসএইচএস ব্রিকস ও গুইমারার মদিনা ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভাটার চুলার আগুন নিভিয়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার(২১শে এপ্রিল) মহালছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় অবৈধ এসএইচএস ব্রিকস ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটার চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভাটার চুল্লির আগুন নিভিয়ে দেয়। পরে সেটি গুড়িয়ে দেয়া হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো: আশরাফ উদ্দিন বলেন, হাইকোর্ট তিন পার্বত্য জেলায় সকল ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সে মোতাবেক অবৈধ ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ সময় হাইকোটের নির্দেশিত অনুযায়ী তিনি ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বলেন, নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইটভাটা চালু করার চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা সব অবৈধ ইটভাটা ছয় সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংস করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোটের নির্দেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন
বায়ু দুষণরোধে হিউম্যান রাইটস এবং পিস ফর বাংলাদেশ এর হাইকোর্টে দায়ের করা রিট মামলার আলোকে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় ইট প্রস্তুুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ ও সংশোধিত ২০১৯এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক অবৈধ ইটের ভাটা দুটির চিমনি ও চুল্লি ভেঙ্গে স্থায়িভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।