রংপুরের পীরগঞ্জের অধিকাংশ সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

পীরগঞ্জের অধিকাংশ সড়কগুলোতে ধান ও খড় শুকানোর ফলে পথচারী ও যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে যত্রতত্র সড়ক দুর্ঘটনা। প্রাণহানিসহ আহতদের সংখ্যাও বাড়ছে আশংকাজনক হারে।

চলতি ভরা ইরি মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান কেটে খড় শুকানোর জন্য উপজেলার আঞ্চলিক পাকা সড়কগুলো ব্যবহার করছে। কেউ কেউ ধান শুকানোতেও ব্যবহার করছে ব্যস্ততম সড়কগুলো। ফলে পথচারীসহ রিক্সা, ভ্যান, অটোরিকশা, বাস, ট্রাক চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ধান ও খড় সড়কে শুকানোর ফলে দুর্ঘটনায় ৫জনের অকাল মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের মহসীন আলীর পুত্র দু’ সন্তানের জনক শহিদুল (৩২) ভ্যানযোগে গত বুধবার ভেন্ডবাড়ী হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় গাদা করে রাখা খড়ে ভ্যান উল্টে প্রাণ হারায়। গত এক সপ্তাহে উপজেলার অন্তত ৩০টি স্থানে সড়ক দুরঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। বেশীর ভাগ দুর্ঘটনায় কবলিত হয়েছে মোটরসাইকেল, রিক্সা ও ভ্যান। আহতদের অধিকাংশই বিভিন্ন মেডিকেলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

সরোজমিনে উপজেলার চৈত্রকোল, বড়দরগাহ্, কুমেদপুর, শানেরহাট, মদনখালী, বড় আলমপুর, রায়পুর, চতরা ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কথা আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি।

ধান শুকানোতে ব্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো।

গোপালপুর- রংপুর সড়কের বাস চালক রতন মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি আওয়ার নিউজকে জানান’প্রতিদিন এই রাস্তায় আমাদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হয়। গাড়ি ভর্তি যাত্রী থাকে। আমন আর ইরি ধানের সময় এলেই এই রাস্তায় খড় ও ধান শুকানোর হিড়িক পড়ে। খড় ও ধান শুকানোর ফলে আমরা যানবাহন নিয়ে চলাচলের সময় চরম বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি।

ভ্যানচালক বিধান চন্দ্র ও খোকা মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভ্যানটায় হামার সম্বল, এটা না চলালে পেটত ভাত যায়না। রাস্তায় খড় দেখিয়ে তারা বলেন, তোরায় কওতো!  ওসমার (কৃষকদের) এ্যানাও কি বিবেক নাই? গোটা রাস্তাত কত পুরু করি খেড় নাড়ি দিছে! পেসেন্জার নিয়ে ভ্যান লোডে নেওছেনা। এরা হামার পেটত নাত্তি মারোছে।

মোটরসাইকেল চালক জাহিদ, রিয়াজ, মাশরাফি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সড়কের প্রায় সকল স্থানে ধান ও খড় দিয়ে ভর্তি। রাস্তাগুলোর কোন কোন স্থানে খানাখন্দে ভরা তাছাড়া স্পীড ব্রেকারগুলোও খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। খড়ের জন্য কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। তাছাড়া সমান্য বৃষ্টি পড়ায় রাস্তার খড়গুলো পিচ্ছিল হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকবার স্লিপ কেটেছে।’

একাধিক পথচারী সড়কে ধান ও খড় শুকাতে দেয়ায় যত্রতত্র সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে দাবি করে বলেন, রাস্তায় খড়, ধান শুকানো থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা অনতিবিলম্বে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রাণী রায় জানান, ‘আমিও রাস্তায় খড় শুকাতে দেখেছি। তাই ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণকে তাদের নিজ নিজ এলাকার সড়কগুলো থেকে খড় বা ধান সরানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সড়ক থেকে ধান, খড় না সরানো হলে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।