পানি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় আইআইটি গৌহাটি
জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাণ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী ৫৭টি। এর মধ্যে শুধু ভারতের সঙ্গে আছে ৫৪টি নদীর সীমানা। প্রতি বছর বর্ষা কিংবা প্রাক-বর্ষায় নদীর পানি ফুলেফেঁপে দেশে সৃষ্টি হয় বন্যা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পাশাপাশি হাওরের পানি বেড়েও ভাসিয়ে নেয় গ্রামের পর গ্রাম। পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা রোধ করা সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে আসামে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব গৌহাটি।
প্রযুক্তি ও গবেষণার জন্য ভারতবর্ষের এ নামকরা ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর প্রফেসর টি জি সীতারাম বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো থেকে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হয়। পানি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় আইআইটি গৌহাটি।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে একটি মিডিয়া ডেলিগেশন টিম আইআইটি পরিদর্শন করে।
তিনি বলেন, দুই দেশের এ নদীগুলো বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ফলে উভয়পক্ষই প্রায় প্রতি বছর বন্যার সম্মুখীন হয়। আমাদের একসঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করা দরকার।
কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে এটি ৩৭তম এবং ভারতের ২৩ আইটি ইনস্টিটিউটের মধ্যে এর অবস্থান দ্বিতীয়। গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে এ ইনস্টিটিউট। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এখানে রয়েছে আলাদা একটি বিভাগ।
পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে এ বিভাগ। অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া ওয়াটার সেন্টার বিভিন্ন দেশের মধ্যে পানি নিয়ে গবেষণা ও শিক্ষার জন্য একটি কেন্দ্র। যৌথ এ উদ্যোগ পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণা, ট্রান্সডিসিপ্লিনারি ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে একটি যৌথ মাস্টার্স স্তরের প্রোগ্রাম, ছাত্র ও কর্মী বিনিময়, কর্মশালা, সম্মেলন এবং ওয়েবিনারের ওপর গুরুত্ব দেয়। সরকারি সংস্থা ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীকে পানিখাতে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণও দেয়।
বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো, বিশেষ করে আসাম, প্রধানত সমতল প্লাবনভূমি, যার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদী।
সীতারাম বলেন, আমরা যে কোনো দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। প্রতি বছর বন্যার সম্মুখীন হওয়া বাংলাদেশের আমাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সহযোগিতার জন্য ইনস্টিটিউট দরকার। যদি বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো।
গঙ্গা যাকে বাংলাদেশে পদ্মা বলা হয় এবং বাংলাদেশের নিম্ন ঢালে যমুনা নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র প্রধান নদী। আরও রয়েছে বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থা, যা উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশ ও আসামের বরাক উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এসব বিষয় নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের একটি হাইড্রোলিক ল্যাবরেটরি আছে। এখানে নদীভাঙন, নদীর পলল প্রবাহ প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করা হয়। আরও অন্য ল্যাবরেটরি আছে যেখানে পানির কোয়ালিটি ও ভূমিকম্প সম্পর্কিত গবেষণা হয়।
‘এই গবেষণাগারে যে মেশিনটি আপনারা দেখছেন এতে পানির ফ্লো সিমুলেট করা হয়। কত কারেন্টে পানি যাচ্ছে, ডেফথ কত, পানির চরিত্র প্রভৃতি গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়।’
বিদেশি কোনো সাপোর্ট ছাড়া এবং এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান টি জি সীতারাম। ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট যারা নিজেরাই ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে- এর বড় উদাহরণ আইআইটি গৌহাটি।
আইআইটি গৌহাটিকে একটি ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারত সরকারের ‘লুক ইস্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সফল বাস্তবায়ন বলে জানান তিনি।
আইআইটি গৌহাটিতে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৮৭ জন স্নাতকোত্তর এবং ২ হাজার ১৪৭ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী। মোট বিভাগ ১১টি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন