খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালিত

খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় অংথোই মারমা’র খুনিদের নামে মামলা পুলিশ না নেওয়ার অভিযোগ করেছে নিহতের স্ত্রী অংক্রা মারমা।

গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার সময় গুইমারার দেওয়ান পাড়ায় নিরাপত্তাসৃষ্ট নব্যমুখোশ বাহিনীর নবীন চাকমা গং কর্তৃক গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের স্থানীয় সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) কে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ ব্যাপক বিক্ষোভ ও খাগড়াছড়ির ৫টি উপজেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়। কিন্তু পুলিশ এখনো ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে উক্ত ঘটনায় নিহতের স্ত্রী অংক্রা মারমা চিহ্নিত খুনি সন্ত্রাসীদের নামে গুইমারা থানায় সু-নিদ্দির্ষ্ট মামলা দিতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ রসিদ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দিতে বলেন অংক্রা মারমাকে। ফলে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে পরে তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হন।

মামলার বাদী অংক্রা মারমা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তার স্বামী অংথোই মারমা আগুনকে হত্যার সাথে নব্যমুখোশ বাহিনীর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিলো। কিন্তু হত্যাকারীদের নামে সঠিক থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি সেই মামলা গ্রহণ না করে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দিতে বলেন। সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে ওসির অস্বীকৃতির কারণে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি জানান। তবে কী কারণে ওসি চিহ্নিত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি সে বিষয়ে জানা যায়নি।

অংক্রা মারমা তার স্বামী অংথোই মারমার দলমত নির্ভিশেষে প্রকৃত হত্যাকারী নব্যমুখোশ বাহিনীর নবীন চাকমা গংদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
সফল অবরোধ পালিত।

খাগড়াছড়ি জেলার পাঁচ উপজেলা গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লংছড়িতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের ডাকা আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে। গত রোববার(৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২২) গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লংছড়ি উপজেলায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে।

সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। অবরোধ পালনকালে অপ্রীতিকর কোথাও কোন ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে পিকেটাররা বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে অবরোধ কর্মসূচি সফল করেন।

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে গুইমারার বাইল্যাছড়ি ও রামগড় সড়কে রাস্তায় পিকেটিং-এর চেষ্টা করলেও আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় পন্ড হয়ে যায়।

অবরোধ চলাকালে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে পাঁচ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। অবরোধের কারণে উক্ত ৫টি উপজেলায় দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-ফেনী গামী দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা সকল যানবাহন মালিক-চালক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান যে, শাসকগোষ্ঠির চক্রান্তের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না। পাহাড়িদের মধ্যেকার একটি প্রতিক্রিয়াশীল-সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি এ সংঘাত জিইয়ে রাখতে মরিয়া অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গুইমারায় অংথোই মারমাকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ এই চক্রান্তে যুক্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি শাসকগোষ্ঠির এই হীন চক্রান্ত থেকে সজাগ থাকার ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

অংগ্য মারমা অবিলম্বে অংথোই মারমাকে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

আইনশৃক্সখলা বাহিনীর তৎপরতায় মাঠে দাড়াতে পারেনি তারা। তার জেরে ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় গুইমারার বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় মোটরসাইকেলকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে ২টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ কর্মীরা। মোটর সাইকেলের ২টির মালিক মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন ও গুইমারা উপজেলার বুদং পাড়ার আরিফুল ইসলাম বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিকেল ৫টায় বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় ১৫/১৬জন দূর্বৃত্ত এসে ৫রাউন্ড গুলি করে এবং ২টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয় দিয়ে সটকে পড়ে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ইউপিডিএফের সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ইউপিডিএফের কর্মীরা একের পর এক বাঙালীদের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

গুইমারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) মুহাম্মদ রশীদ জানান, নিহত অংথোই মারমা’র স্ত্রী অংক্রা মারমা মামলার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অবরোধের দিন তার এলাকার বিভিন্ন সড়কে ৭টি স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় সেনাবাহিনীও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশকে সহযোগিতা করে। ঘটনার দিন তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল নিশ্চিত করছেন। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি। অবরোধ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনার পর দিন থেকে এলাকায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার(২ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার সময় গুইমারার দেওয়ান পাড়া এলাকায় সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা আগুনকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু প্রশাসন হত্যাকারীদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। গুইমারা উপজেলায় আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিপক্ষের গুলিতে বন্দুকযুদ্ধে ইউপিডিএফ(প্রসিত গ্রæপ) আঞ্চলিক কমান্ডার অংথুই মারমা ওরফে আগুন(৫২) নিহত হয়। শুক্রবার(২রা সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ৯টার দিকে গুইমারা উপজেলার দেওয়ান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলার পাঁচ জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক দেয়।