সাবধান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ গিলে খাবে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপি থেকে সবাইকে সাবধান হওয়ার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গিলেছিলো। এবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে। বড়লোকের বাড়ির সামনে লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান। আমরা বলি বিএনপি থেকে সাবধান।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এদেশের অর্থনীতি গিলে খেয়েছে। মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানুষের স্বাধীনতা গিলে খেয়েছে। তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশকে গিলে খাবে। তাদের হাতে এদেশ নিরাপদ নয়।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলার ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউন করে ক্ষমতাসীন দল।

পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠ হাজারো নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠে। বিকাল ৪টার দিকে দেখা যায়, সম্মেলন স্থল কানায় কানায় পূর্ণ। নেতা-কর্মীরা নানা রঙের পোশাকে উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছেন সম্মেলনে।

সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আগারগাঁও এসেছেন ঢাকার ৫টি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। সম্মেলনের জন্য নৌকার আদলে বড় আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের সামনে রাখা হয় ২৫ হাজার চেয়ার।

দুপুর ২টার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

প্রধান অতিথির ভাষণে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জানানে রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন গিয়ে স্টেজে, মাঠে ও রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুয়ে আছেন টাকার বস্তার ওপর। সম্মেলনের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আসছে, আর তারা সেই টাকার ওপর শুয়ে আছেন।

তিনি বলেন, বিএনপির সম্মেলনে কতজন লোক হয়েছে তা আমরা দেখেছি। আজকে শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কত লোক হয়েছে আপনারা দেখে যান। এখানে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নেই। তারপরও কত লোক।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে জনসমাগম বিষয়ে কাদের বলেন, চট্টগ্রামে লাখের কাছাকাছি, ময়মনসিংহে ৩০, খুলনায় ৩০, রংপুরে কত করলেন ৫০-৬০ (হাজার); আর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কত লোক হয়েছে খবর নিন।

বিএনপির বিরুদ্ধে ‘খেলা হবে’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, খেলা হবে, খেলা হবে। ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনরে বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। যারা ১ কোটি ভুয়া ভোটার তালিকা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালত জাদুঘরে পাঠিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেন লাভ হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলুন। নির্বাচনে আসবেন না? আসবেন। গাধা পানি ঘোলা করে খায়।

বিএনপি আমলে মাত্র চার বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিলো উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পরে ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ হয়েছে। এখনো ৩৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। তারপরও বিএনপি রিজার্ভ নিয়ে মিথ্যা বলে।

তিনি মির্জা ফখরুলকে চ্যালেঞ্জ করে আরো বলেন, পলো গ্রাউন্ডে (চট্টগ্রাম) দেখাব ৪ ডিসেম্বর। শেখ হাসিনা যাবেন সেখানে, ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে।

সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, যেখানে যান, সেখানেই দেখবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা আর সফলতা। তার নেতৃত্বে আজ আমাদের দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। জনগণ আবারও নৌকাকে জয়যুক্ত করবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের মানুষ মনে করে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতদিন দেশ চলবে, ততদিন এ দেশ আলোকিত থাকবে। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। যেখানে যান, সেখানেই দেখবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা আর সফলতা। পাশাপাশি তাকে হত্যার চেষ্টাও দেখেছি। তিনি নির্ভীক সুদূরপ্রসারী নেতা।

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু দিন ধরে শুনছি, তারা (বিএনপি) নাকি ১০ ডিসেম্বর সারা ঢাকা দখল করে ফেলবে, আমাদের তাড়িয়ে সবাইকে তাড়িয়ে দেবে। শুনছি, আমরা জানি না। ঘোষণা দেয়নি, প্রস্তুতি চলছে। আবার মন্ত্রিপরিষদও গঠন করে ফেলেছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, কীভাবে আপনারা মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন এবং কীভাবে আপনারা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করছেন? আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ম্যানডেট নিয়ে চলে। জনগণের শক্তিতে চলে। আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। সে জন্য সব সময় আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে থাকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, জনগণ যেমন প্রতিবার প্রধানমন্ত্রীকে ম্যানডেট দিয়েছে, জনতার উপস্থিতিতে এটাই প্রতীয়মান, এ দেশের জনগণ কখনো ভুল কাজ করবে না। তারা আবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে, আবার প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় আসিন করবে।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ঢাকা জেলার প্রতিটি থানায় আগামী দু’মাসের মধ্যে জনসভা হবে। জনসভার মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা হবে এবং বিএনপিকে জবাবও দেয়া হবে।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে চায়। আমরা বেঁচে থাকতে দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হতে দেবো না, দেবো না। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল ও শেখ রাসেল হত্যায় তার ফাঁসি হতো।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পাকিস্তানি ভাবধারার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এর আগে সংবিধানকে পদদলিত করেছে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত করেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা আন্দোলন সংগ্রামের নামে সন্ত্রাস করতে চায়। কোনো ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নেবো না। সকল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক; কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ছিলো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মঞ্চের দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখানে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা। নারী ও পুরুষের জন্য তৈরি করা হয় আলাদা শৌচাগার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা মঞ্চ।