সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে সড়ক নির্মাণে ধীরগতি, আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে ধীরগতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় বন্দরে ভারত থেকে আসা ট্রাকের পণ্য খালাসে দীর্ঘ সময় লাগছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে সড়কে ট্রাক উল্টে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ভোগান্তি এড়াতে আমদানিকারকরা ভোমরার পরিবর্তে দেশের অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য আনছেন। এতে কমেছে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আয়। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।
তবে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, দ্রুত ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ভোমরা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। ওই সময় ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন-চারশো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো। তবে বন্দর এলাকায় এক কিলোমিটারের বেশি অংশে সড়কে কংক্রিটের ঢালাই কাজ শুরু হয় এপ্রিল মাসে। তখন থেকেই কিছুটা থমকে গেছে কার্যক্রম।
ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আট মাস ধরে ধীরগতিতে চলছে সড়কের নির্মাণকাজ। সড়ক নির্মাণের জন্য কয়েকটি স্থান খুঁড়ে রাখায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ট্রাকচালকসহ এলাকার সাধারণ মানুষকে। সড়কে সৃষ্ট খানাখন্দে পড়ে যখন তখন ট্রাক উল্টে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া বন্দর এলাকায় সব সময় থাকে দীর্ঘ যানজট। ফলে বন্দর থেকে পণ্য খালাসে দীর্ঘ সময় লাগে। এজন্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক মো. মোহসিন হোসেন বলেন, ভোমরা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর। কিন্তু এই বন্দরের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। বন্দর এলাকায় সড়কে সব সময় তীব্র যানজট থাকে। এ কারণে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ফলসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি একেবারে কমে গেছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে মালামাল পরিবহন করা কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ব্যাংকে এলসি নিয়ে কিছু জটিলতা হচ্ছে এজন্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকছুদ খান বলেন, ভোমরা বন্দরে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হচ্ছে। আগে এখানে গড়ে ৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। পদ্মা সেতু চালুর পর এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে বর্তমানে আমাদের বন্দরের মধ্যে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ধীরগতির কারণে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এই বন্দরে সব ধরনের পণ্য আনার অনুমতি নেই। অন্য বন্দরে কিছুটা ছাড় থাকলেও এই বন্দরে পণ্য আমদানিতে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকেও এলসি নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার কারণে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এজন্য বন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই বন্দরের কার্যক্রম আরও বাড়বে।
ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা দয়াল মণ্ডল জানান, চলতি অর্থবছর ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২৬ কোটি টাকা। তবে অক্টোবর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় কোনো কাজ করার জন্য বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের বিএসএফের অনুমোদন প্রয়োজন। সেটি পেতে আমাদের কিছুটা দেরি হয়েছে। এছাড়া বন্দরে সারাদিনই যানজট লেগে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে একাধিক পার্ট করে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। সেটি সঠিকভাবে জমতে কমপক্ষে ২৮ দিন সময় লাগে। দিনে ট্রাক চলাচল করায় সেখানে কাজ করা যায় না। রাতে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য কাজের সময় বেশি লাগছে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাজের সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যেই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২২ কোটি ৪৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৫৩ টাকা ব্যয়ে ভোমরা বন্দরের ১ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার সড়ক কংক্রিটের ঢালাই করে নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়। কাজটির দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাছুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ১৯ অক্টোবর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন