যশোরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী বিল্লালের টিউবওয়েল দেওয়ার নামে প্রতারণা
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামে নিজের পিতার নাম জালিয়াতি করে অন্য মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী বিল্লাল হোসেনের নামে এবার টিউবওয়েল দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর বরাতে জানা গেছে, ২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযুক্ত বিল্লাল তাদেরকে বলে যে, বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকুপ স্হাপন করবে। সে ঝিকরগাছা উপজেলার সভাপতি হিসাবে ১০০ টিউবওয়েল বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিটি টিউবওয়েল এর জন্য ২৫০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। মাত্র ২৫০০ টাকায় আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল পাওয়ার আশায় আশে পাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এই সুযোগে সুচতুর বিল্লাল প্রায় দুই শতাধিক লোকের কাছ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করে। তিনমাসের মধ্যে এই টিউবওয়েল স্হাপন করার কথা থাকলেও একবছর পার হয়ে গেলেও কেউ একটি টিউবওয়েলও পায়নি। কেউ সেই টিউবওয়েলের কথা বলতে গেলে বিল্লাল হোসেন টিউবওয়েল হবেনা আর টাকাও দিতে পারবেনা বলছে।
কুলিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, টিউবওয়েল এর জন্য আমি আড়াই হাজার টাকা দিয়েছি একবছর আগে। এখনো টিউবওয়েল পায়নি। এবিষয়ে কিছু বললে বিল্লাল ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কুলিয়া গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, আমি বিল্লালের কাছে ৮টি টিউবওয়েল এর টাকা জমা দিয়েছি। আজ দি কাল দি বলে সে আমাকে ঘোরাচ্ছে। পানিসারা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নাম ভাঙিয়ে বিল্লাল বহু মানুষের কাছ থেকে আড়াই হাজার করে টাকা নিয়েছে টিউবওয়েল দেবে বলে। আমিও গ্রামের মসজিদ, মাদরাসা এবং মন্দিরের জন্য ৪টি কলের টাকা দিয়েছি। এখন টিউবওয়েলও পাচ্ছি না, টাকাও পাচ্ছি না। পানিসারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য হাস্নাহেনা বলেন, সস্তায় টিউবওয়েল পাওয়ার জন্য গ্রামের দশজন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিল্লালকে দিয়েছিলাম। এখন লজ্জায় তাদের সামনে যেতে পারিনা। একই ইউনিয়নের আরেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তরুনা বেগম বলেন আমি পাচঁ জনের কাছথেকে টাকা নিয়ে বিল্লালকে দিয়েছি। সে আজ এক বছর ধরে ঘোরাচ্ছে। একটি টিউবওয়েলও কাওকে দেয়নি।
কুলিয়া গ্রামের সাদা মনের মানুষ খ্যাত বিশিষ্ট সমাজসেবক সায়েদ আলী বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ অভিযোগ করছে যে তাদের কাছথেকে বিল্লাল টাকা নিয়েছে। আমিও আমার বোনজামাই আতিয়ারের জন্য একটি টিউবওয়েল দেবার টাকা দিয়েছিলাম। এখন সবার মত আমিও কোনো টিউবওয়েল পাইনি, পাবো কিনা জানিনা।
পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পিপুল বলেন, বিল্লাল আমার কাছথেকে একটি টিউবওয়েল এর জন্য ২৫০০ টাকা নিয়েছে। এখন শুনছি এরকম ২০০/২৫০ লোকের কাছথেকে টাকা নিয়েছে। গত মাসের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এই বিষয়টি নিয়ে ইউ এন ও সাহেবকে বলেছি। তিনি নামের তালিকা করে জমা দিতে বলেছেন। খুব শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও কুলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, বাবলু, কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান, আলমগীর, লালটু সহ পার্শ্ববর্তী হাজিরবাগ, নির্বাসখোলা এবং বাঁকড়া ইউনিয়নের বহু মানুষের কাছথেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়র অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন কে টিউবওয়েল এর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ৬০/৭০ হাজার টাকার টিউবওয়েল আমি ২৫০০ টাকায় দিয়ে জনগণের সেবা করছি। তিনি উল্টো এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন করেন, আমি যদি ২৫০০ টাকায় টিউবওয়েল দিতে পারি তাতে কি কোনো সমস্যা আছে? তিন মাসের কথা বলে এক বছরেও কেনো টিউবওয়েল দেয়া হলোনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় হলে সবাই পেয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যশোর জেলা কমিটির সদস্য সচিব শাফি সমুদ্র বলেন, আমাদের সংগঠন থেকে এভাবে টিউবওয়েল দেওয়ার কোনো প্রকল্প নেই। ঝিকরগাছা শাখার সভাপতির সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে টাকা আত্মসাৎের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা যদি তিনি করেন তবে সেই দায় দায়িত্ব তার।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, এলাকাভিত্তিক এধরণের প্রতারণার করলে ভুক্তভোগীগন যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে অন্যের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিজেদের আইডি কার্ড জালিয়াতি করে আত্মসাৎ করার বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের এক জরুরী বৈঠকে বিল্লাল হোসেন কে উপজেলা সভাপতির পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন