চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করলো মাদকব্যবসায়ীরা
মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তারিক হোসেন (৪৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদকব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার ভারত সীমান্তের তারকাঁটার কাছ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তারিককে উদ্ধার করে ৫৮ বিজিবির রহলরত সদস্যরা।
পরে তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে তাকে জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা দেয়ার পর অবস্থার অবনতি দেখা দিলে যশোরের একটি হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানেও চিকিৎসা শেষে অবস্থার কোন উন্নতি না হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসা করার আগেই সকাল ১০টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে তারিক হোসেন।
জানাযায়, এর আগে গত সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তের ৬৮নং মেইন পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকজন মাদকব্যবসায়ী ভারত থেকে ফেনসিডিল আনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। সেসময় তারিক হোসেনকে দেখতে পেয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
তারেক জীবননগর উপজেলার সীমান্ত এলাকার গয়েশপুর গ্রামের বড়পুকুরপাড়ার রবগুলের ছেলে।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম মিল্টন নিশ্চিত করে বলেন, তারেক ঝিনাইদহ মহেশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির কাছে মাদকের গুরুত্বপূর্ণ চোরাচালানের তথ্য সরবরাহ করতেন। এককথায় তিনি বিজিবির সোর্স ছিলেন। চোরাকারবারীদের সাথে দ্বন্ডের জের ধরেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারাণা করছি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, তারিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করে আসছিল। সে কারণেই মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তাঁর দ্বন্ড ছিল।
নিহত তারিকের পিতা রবগুল হোসেন বলেন, আমার ছেলে গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কারা যেন ডেকে নিয়ে যায়। পরে সংবাদ পেয়ে রাত দেড়টার দিকে তাকে দোয়াল মাঠ থেকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করা করি।
নিহত তারিকের পরিবার ও প্রতিবেশিরা জানায়, তারিক বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতো। রাতে সোর্সের দায়িত্ব পালন করতে গেলে ভারত সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীরা তারিককে দেখতে পেয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এদিকে, এলাকাবাসী নিহত তারিককে বিজিবির সোর্স হিসাবে দাবী করলেও বিজিবি তা অস্বীকার করেন। গয়েশপুর বিজিবি ক্যাম্পের দাবী ঘটনার সময় রাতে বিজিবি সদস্যরা এলাকায় টহল দেয়ার সময় তারিককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার পরিবারকে সংবাদ দেয়।
জীবননগর থানার ওসি আব্দুল খালেক জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তারিক মুলত ভারত সীমান্তের ভেতরে জামতলা নামক স্থানে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকারে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হলেও ওই অবস্থায় সে দৌড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তর গয়েশপুর দোয়াল মাঠে একটি কলা বাগানের ভেতরে পড়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু ধারণা করা হচ্ছে, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তারিকের ঘটনার সময় কোন একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হামলার শিকার হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, তারিক বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতো বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ময়না তদন্তের পর তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে লাশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। আশা করছি দ্রুতই তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারবো।
মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) পরিচালক শাহিন আজাদ বলেন, ‘বিজিবির সোর্স’ কারোর পেশা নয়। আমাদের নিকট অনেকেই চোরাচালানীদের তথ্য সরবরাহ করেন। নিহত তারেকও আমাদের নিকট চোরাকারবারীদের তথ্য সরবরাহ করেছিলেন, আমরা অভিযানও করেছিলাম। আসলে তথ্য সরবরাহকারীরাও চোরাকারবারীদের সঙ্গেই জড়িত থাকেন। ধারণা করা হচ্ছে মাদক চোরাকারবারীর দু’গ্রুপের দ্বন্ডে ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন