চুয়াডাঙ্গায় বিজয় উল্লাসে ৯০ শিশুকিশোর আটক
বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা যেন ফাইনালের মত হয়েছে। ফুটবল খেলা কাতারে হলেও সকল উম্মাদনা আনন্দ উল্লাস যেন ছিল আর্জেন্টাইন চুয়াডাঙ্গার সমর্থকদের।
খেলা শেষ হতে না হতেই সমর্থকরা তাদের উচ্ছ্বাস জানান দিতে মধ্যরাতেই বের হয় চারিদিকের খণ্ড খণ্ড মিছিল। সে সকল মিছিল একে একে মাথাভাঙ্গা ব্রিজে মিলিত হয়। পরে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে নাচানাচির মধ্যদিয়ে বিশাল আনন্দ র্যালি নিয়ে আতশবাজি পটকার আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গা। মনে হচ্ছিল খেলা কাতারে নয়, যেন চুয়াডাঙ্গায় হয়ে গেল কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ। আনন্দের ফুলকিতে আগুনের তিল পরিমাণ কমতি ছিল না পাগলপ্রেমী সমর্থকদের মধ্যে।
প্রায় দেড় দুই হাজার সমর্থক ঘিরে ফেলে জেলার প্রধান সড়ক চৌরাস্তা মোড়টিকে। সেখানে পুরো শহরের প্রায় তিনশোরও বেশি মোটরসাইকেলে হর্ণ বাশি বাজিয়ে উচ্চশব্দে এবং পায়ে হাটা সমর্থকদের ড্যান্স হৈ হুল্লরয়ে সরগরম হয়ে ওঠে চৌরাস্তার মোড়। প্রায় দেড় দুই ঘণ্টা ধরে আনন্দ উল্লাসের ভারিতে ভর করে কিছু পুলিশও। শীতকে উপেক্ষা করে ফুটবলপ্রেমী সমর্থকদের বাধভাঙা এ আনন্দে সাময়িক হলেও পুরোই জনসমুদ্রয় ভেসে গিয়েছিল চুয়াডাঙ্গার সমর্থকরা।
এ আনন্দঘন মুহূর্তে মধ্যরাতে দুরপাল্লার মালবাহীট্রাকও কিছু সময় আটকা পড়ে। এতে চালকরাও উপভোগ করে আর্জেন্টিনার বিজয়কে ঘিরে। ট্রাক থামিয়ে হেড লাইটের সামনে নেচে গেয়ে আরও উত্তাল করে তোলে আত্মঘাতি কিছু সমর্থক। তবে ৩৬ বছর পর নতুন করে ২০২২ বিশ্বকাপকের চিহ্ন রেখে গেল আর্জেন্টিনা দেশটি। সেইসাথে আনন্দ উল্লাসকে স্মরণ করিয়ে রাখলো চুয়াডাঙ্গার সমর্থকরা।
এদিকে, আর্জেন্টিনার বিজয়ের উল্লাস মনের মধ্যে ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে ৯০ থেকে ৯৫ শিশুকিশোর বাইরে বের হয় ট্রাক নিয়ে।
অতি উৎসাহী সমর্থকরা অনিরাপদ আশঙ্কার মধ্যদিয়ে ট্রাকের ওপর নেচে গেয়ে উল্লাস করতে করতে আসছিল চুয়াডাঙ্গা শহরে। তারা জেলার আলমডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গা গ্রাম থেকে এসেছিল।
চুয়াডাঙ্গার মধ্যমণি চৌরাস্তা সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা ব্রিজে সমর্থকদের জ্যামে পড়ে ট্রাকচালক। সেসময় গাড়ী নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে ডিউটিরত পুলিশের সন্দেহ হলে কাছে গিয়ে দেখে চালক একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। পরে তাদেরকে নিরাপদে রাখতে ট্রাকসহ শিশুকিশোরদের সদর থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
পরে শিশু কিশোরদেরকে তাদের পরিবারের জিম্মায় দিলেও ট্রাক জব্দসহ চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাকে আটক রাখা হয়।
পুলিশ জানায়, আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রাম থেকে একটি খোলা ট্রাকে করে প্রায় ৯০-৯৫ জন আর্জেন্টাইন সমর্থক অনিয়ন্ত্রিতভাবে আনন্দ উল্লাস করছিল। এদের মধ্যে ৭ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সীরাই বেশি। ট্রাক চালকও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে কত জীবন ঝরে যেতে পারতো। বিষয়টি খেয়াল করেই তাদেরকে জিম্মায় নেয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রত্যেক শিশুকিশোরকে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। সেসময় পরিবারকে সন্তানদের প্রতি সতর্কতার পরামর্শ দেন ওসি মাহব্বুর। পরে কাগজপত্র যাচাইবাচাই করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালককে ছেড়ে দেয়া হয়।
অপরদিকে, স্থানীয়দের সচেতন মহলের অনেকেই জানিয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ের উল্লাস করতে শিশু কিশোরদের ট্রাক চালিয়ে আসা ঠিক হয়নি। এতে অনেক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। আবার তাদেরকে থানা হেফাজতে নেয়াও ঠিক হয়নি। যেহেতু মধ্যরাত সেহেতু রাস্তায় দাড় করিয়ে পরিবারের জিম্মায় দিতে পারতো পুলিশ।
কারণ শিশুকিশোরদের আটকে না রাখলেও থানায় নিয়ে যাওয়া মানে পুলিশের ওপর বিশেষ করে শিশুদের মনে যেমনী আতঙ্ক সৃষ্টি হয় তেমনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন