রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া, ২৭ দিনে এলো ১৮ হাজার কোটি টাকা
দেশে ডলার সংকট কাটিয়ে নতুন বছরের শুরুতে হাওয়া লেগেছে রেমিট্যান্সের পালে। জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৭ দিনে এসেছে ১৬৭ কোটি ৬ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে গত ডিসেম্বরে মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। তাই চলতি মাসে রেমিট্যান্স আরও বেশি হওয়ার প্রত্যাশা বাংলাদেশ ব্যাংকের। সেই সূত্র ধরে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার ছড়িয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের প্রথম ২৭ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এরমধ্যে ১৪০ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার বেসরকারি ব্যাংকে এবং ২২ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এছাড়া বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার।
সেই হিসেবে দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসছে। এছাড়া ২৪ জানুয়ারি একদিনে মাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। সেদিন ৭ কোটি ডলার বৈদেশিক আয় আসে।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া পুরো মাসজুড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৬ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে চলমান অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরটি কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যদিয়ে শেষ হয়। সে বছর দেশে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তা কমতে শুরু করে। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লাগে। সেই ইতিবাচক ধারা এখনও অব্যাহত আছে।
অপরদিকে এ সময়ের মধ্যে দেশের সাত ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ (২৫ জানুয়ারি) তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কম ধরা হয়। সেই হিসাবে বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভ রয়েছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার। যা গত আট বছরে সর্বনিম্ন।
করোনা মহামারি শেষে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকেই বৈদেশিক লেনদেনে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এরপর সরকারের নেওয়া বেশ কিছু প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন