আওয়ামীলীগের ‘শান্তি সমাবেশ’

বিএনপির পদযাত্রা’র নামে অগ্নি-সন্ত্রাস!!

সিরাজগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিক সদর উপজেলার কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের হামলায় অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। পুলিশের দাবি বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায়।

এদিকে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১টার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানালে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

এসব ঘটনা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অভিযোগ বিএনপি কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে থাকে। কিন্তু কেন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে?- তা এখন প্রকাশ্যে সামনে এসেছে। কেননা বিএনপির অগ্নি-সন্ত্রাস ঠেকাতে এবং দেশের জনগণের জান-মাল রক্ষা করতেই আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে থাকে-এটি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বিভিন্ন কর্মসূচির দিনে বারবার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আসছেন।

এছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা সহিংস রাজনীতি করে-এটা দেশের জনগণ জানে। সে ঘটনার পুণরাবৃত্তি বিএনপি আজও করেছে। সিরাজগঞ্জে এবং নারায়ণগঞ্জে অগ্নি-সন্ত্রাস করেছে- যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশ কয়টি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করেছে। তাদের এই অগ্নি-সন্ত্রাস ঠোকাতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে অবস্থান নিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশ বাহিনীর ওপরও চড়াও হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু এলাকায় বিএনপির সহিংসতার এমন চিত্র দেখা গেছে- যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের; রাষ্ট্রীয় এবং জনসাধারণের জান-মাল রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব।

এদিকে সিরাজগঞ্জের কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির জন্য পাইকপাড়া মোড়ে সমবেত হন। পাশ দিয়েই বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় উভয় দলের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে সড়কের ওপর থাকা ১৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে ১০-১৫ জন হয়েছেন। এ ঘটনা প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে জানান, উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিকে বিঘ্ন ঘটাতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ এ ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য এখানে সাংঘর্ষিক। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন- তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একটি ক্ষমতাসীন দল কখনও অগ্নি-সন্ত্রাস বা মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে না। বরঞ্চ জনগণের জান-মাল রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। যে কারণেই সরকারে থাকা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপির এসব অগ্নি-সন্ত্রাস মোকাবেলা করতেই এবং জনসাধারণের পাশে দাঁড়াতেই শান্তি সমাবেশ করে থাকে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আবদু গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপণ্যসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়া ও নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রার অংশ হিসেবে সাতগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে মিছিল বের করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ’ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। নেতা-কর্মীরা পাঁচরুখী বাজার থেকে পদযাত্রা শুরু করে। বাজার থেকে কিছুদূর গিয়ে পদযাত্রা শেষ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে সাতগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ, ছাত্রদল নেতা ফারুক, যুবদল নেতা হাবিবসহ দশজন আহত হন। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।

জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানা পুলিশের ওসি আজিজুল হক গণমাধ্যমকে জানান, রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু অনুরোধ না শুনে পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন তারা। পরে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের এসআই নূর আলম, এএসআই সৈয়দ আলী, কনস্টেবল আলমগীরও আহত হয়েছেন ৷ তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ৷ ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা না গেলেও এই ঘটনায় থানায় মামলা হবে।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রেও বিএনপি এবং পুলিশের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। যদি পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে থাকে, তবে পুলিশ সদস্যরা কেন আহত হবে? – এ ঘটনা থেকেও প্রমাণিত হয়, বিএনপি সহিংস রাজনীতি অর্থাৎ আগ্নি-সন্ত্রাসের পথেই আছে। সেক্ষেত্রে জনগণের জান-মাল রক্ষায় আওয়ামী লীগের মাঠে থেকে শান্তি সমাবেশ করার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপণ্যসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি যে আন্দোলন করছে- তাতে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, -তা দেশের জনগণ মেনে নিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির আন্দোলনের কিছু নেই। জনগণ যদি প্রয়োজন মনে করতো- তবে জনগণই রাজপথে নেমে আসতো।

এসব বিষয়কে ইস্যু করে বিএনপির অগ্নি-সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা আর সম্ভব নয়। এখন দেখার বিষয় বিএনপি আর কতদিন এমন সহিংস রাজনীতির পথে থাকে এবং আওয়ামী লীগ তাদেরকে কিভাবে প্রতিহত করে।