ঐতিহাসিক বদর জিহাদ দিবস
হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশার সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দু্রুদ শরীফ ও সালাম বদরের অবস্থান: পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত বদরের প্রান্তর।
মুসলিম বাহিনীর পতাকা: হযরত মুসআব ইবন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে জিহাদের পতাকা অর্পণ করা হয়। এ পতাকা ছিলো সাদা রঙের। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে ছিলো দুটি কালো পতাকা। এর একটি ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে। এ পতাকার নাম ছিলো ইকাব (ঈগল)। আর অন্য পতাকাটি ছিলো জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারক-এ।
জিহাদ সংঘটিত হওয়ার তারিখ: দ্বিতীয় হিজরী, হিজরতের ১৯তম মাসে ১৭ই রমাদ্বান শরীফ জুমুয়াবার দিন।জিহাদ চলাকালীন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দায়িত্বশীল: হযরত আবূ লুবাবা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিলো। মুসলিম সৈন্য: ৩১৩ জন মতান্তরে ৩১৫ জন। ৭৭ জন মুহাজির ও ২৩৬ জন আনছার। সরাসরি জিহাদে উপস্থিত না হয়েও গণীমত লাভ: ৮ জন।
ঘোড়ার সংখ্যা ও আরোহী: মাত্র ৩টি। (১) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার নিজ ঘোড়ার নাম রাখেন ‘খায়লুল্লাহ। (২) হযরত মুসআব ইবনে উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩) হযরত যুবায়র ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
উটের সংখ্যা ও আরোহী: এক একটি উটের পিঠে কয়েকজন করে আরোহণ করে উনারা জিহাদে গমন করেছিলেন।
তরবারী, বর্ম ও অন্যান্য অস্ত্র: তরবারী মাত্র ৮টি। বর্ম মাত্র ৬ টি। বাকিদের অধিকাংশই ছিলো লাঠি
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে: দক্ষিণ বা ডান বাহুতে হযরত সাআদ ইবনে খায়ছাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বাম বাহুর নেতৃত্বে হযরত মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
কিছু সাংকেতিক বিষয়: (১) মুহাজিরদের আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদির রাহমান’। (২) খাযরাজ গোত্রের কাউকে আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদিল্লাহ’। (৩) মুজাহিদ ছাহাবী উনাদের সাধারণ সঙ্কেতসূচক শব্দ ছিলো ‘আহাদ আহাদ।
কাফির বাহিনীর অবস্থা: মুশরিকদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। তাদের সঙ্গে ছিল একশত অশ্ব ও জিহাদ সম্ভারে বোঝাই সাতশত বা তার চাইতেও অধিক সংখ্যক উট। তাছাড়া তাদের অশ্বারোহী প্রত্যেকটি সৈনিক ছিল বর্মাচ্ছাদিত; এমনকি পদাতিক সৈন্যরাও বর্মধারী ছিল। তারা প্রতিদিন ১১টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করতো।প্রথম মল্লযুদ্ধ: হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শায়বার বিরুদ্ধে।
সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি উতবার বিরুদ্ধে।সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ালীদের বিরুদ্ধে।
জিহাদে প্রকাশিত বিশেষ মু’জিযা শরীফ: হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হলেন, তখনো উনার হাতটি চামড়ার সাথে ঝুলছিল। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মুখ মুবারক উনার নূরুল বারাকাত মুবারক উনার কাটা হাতে লাগিয়ে দিলেন, আর হাত তখনই ঠিক হয়ে গেল।
* নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ধুলোবালিযুক্ত এক মুঠো কঙ্কর শত্রু পক্ষের দিকে নিক্ষেপ করেন। দেখা গেলো, এমন কোনো মুশরিক ছিলো না, যার দুই চোখে ওই ধুলোবালি লাগেনি। এরপর মুসলমানরা পিছনে ধাওয়া করে তাদেরকে হত্যা ও বন্দি করেন।
* হযরত উক্কাস ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তরবারিটি ভেঙে যায়। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে একখানা কাঠ দিলেন। তা একটি ঝকঝকে লম্বা তরবারিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
* হযরত কাতাদা ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চোখে দারুণভাবে আঘাত লাগে। এতে চোখের পুত্তলি বের হয়ে গ-দেশে ঝুলতে থাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ডেকে কাছে এনে পুত্তলিটি ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দেন। এতে উনার চোখ এমন ভালো হয়ে যায় যে, তিনি বুঝতেই পারতেন না যে, কোন চোখে আঘাত লেগেছিলো।
হযরত সাওয়াদ ইবনে আযিয়া রদ্ব্য়িাল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদরের জিহাদের দিন কাতার সোজা করার সময় লাঠি দিয়ে পিঠে মৃদু আঘাত করেন। এতে তিনি মুবারক খিদমতে প্রতিশোধ নেয়ার আঘাত আবেদন করেন। মুবারক অনুমতি পেয়ে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারকে বুছা মুবারক দেন।
তিনি এরূপ করলেন কেন, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, আমি আজ শাহাদাত বরণ করবো। অর্থাৎ শাহাদাত বরণের ব্যাপারে তিনি আগাম জানতেন।অতএব যামানার ইমাম ও মুযতাহিদ রাজারবাগ শরীফের হযরত মুজাদ্দিদে আযম মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার উসিলায় ১৭-ই রমাদ্বান শরীফ ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ দিবসের ফজিলত দান করুন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন