দাম বৃদ্ধিতে অন্যত্র সার মজুদ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিসিআইসি ডিলার মোস্তফা জামালের ২৩৯ বস্তা সার জব্দ
দেশ ব্যাপী সারের দাম পাঁচ টাকা বৃদ্ধিতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ডিলার মোস্তফা জামাল রাজুর অবৈধভাবে মজুদ রাখা ২৩৯ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের মৃত মহিব উদ্দিনের ছেলে ফয়জুল হকের বাড়ীতে ১৬৩ বস্তা এবং কালদাসপাড়া এলাকায় মোস্তাফা জামাল রাজুর নিজস্ব চায়ের বাগান থেকে ৭৬ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করা হয়।
এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তারেক হোসেন, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোতালেব, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ফারুক, ইউপি সদস্য মোঃ আইবুল হক, ইউপি সদস্য আতাউর রহমান, ইউপি সদস্য তারিফ হোসেন প্রধান, সাংবাদিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বসাধারনগণ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ওই ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল (রাজু)। দেশে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার খবরে কৃষকদের বরাদ্দকৃত সার রাতের আধাঁরে ও ভোর রাতে বিভিন্ন জায়গায় মজুদ করে রাখেন মোস্তফা জামাল (রাজু)। দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারীরা ডিলার পয়েন্টে সার মজুদের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পূর্বের দরে বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজে এমওপি-৫০ বস্তা ও টিএসপি-৫০ বস্তা মজুদের বিবরণ দেয়া হয়েছে।
বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক অবৈধভাবে মজুদের তথ্যের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েক জন সাংবাদিক ওই দিন সকালে ফয়জুল হক মিস্ত্রীর বাড়ীর বাহিরে তাঁর পরিবারকে অবৈধভাবে সার মজুদ রাখার কথা জিজ্ঞাসা করতেই রাগান্বিত হয় এবং বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। ওই সময়ে সাংবাদিকরা উপায়অন্ত খুঁজে না পেয়ে চলে আসেন শিলাইকুঠি বাজারে। এদিকে সাংবাদিকগণ ফিরে আসার ২০ মিনিটেই ফয়জুলের ছেলে মমিরুল অটো ভ্যানে সার গুলো অন্যত্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোড শুরু করেন।
সোর্সের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে সাংবাদিকগণ উপস্থিত হোন এবং ভ্যানে লোডকৃত সার গুলো ক্যামেরা বন্দি করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহাকে অবগত করা হলে তিনি কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম সরেজমিনে এসে ফয়জুল হকের বাড়ীতে থাকা ১৬৩ বস্তা ও চা-বাগানে ৭৬ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করে চেয়ারম্যানের ও ইউপি সদস্যদের হেফাজতে রাখেন।
সার ডিলার মোস্তফা জামাল রাজু মুঠোফোনে জানান, সার গুলো আমার ক্রয়কৃত।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি লিখিত’র মাধ্যমে সার গুলো চেয়ারম্যানের হেফাজতে রাখা হয়েছে। মোস্তফা জামাল রাজু সার গুলো তার ক্রয়কৃত বলে দাবী করেন। সার ডিলার রাজুকে ক্রয়কৃত সারের উপযুক্ত মেমো বা রশিদ প্রদর্শন পূর্বক উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদনের মাধ্যমে বুঝে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে ব্যর্থতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি উপজেলা কৃষি অফিসারকে থানার মাধ্যমে মামলা করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
বিসিআইসি নীতিমালা অনুসারে জানতে পারা যায়, বিসিআইসি সার ডিলারদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব দোকান অথবা গুদাম ব্যতীত নিজ বাড়িতেও সার মজুদ রাখার কোন সুযোগ নেই। উপরোক্ত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে প্রয়ো জনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।এবং সারের দোকানে কীটনাশক ব্যতীত অন্য কোন পন্য রাখা যাবে না বা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে সার বিক্রয় করতে চাইলে অবশ্যই দোকানে যার নামে লাইসেন্স তার নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। এবং লাইসেন্স এর ফটোকপি দোকানে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিসিআইসি ডিলারগন বরাদ্দের কম পক্ষে ৫০% সার খুচরা ডিলারদের সরবরাহ করতে হবে। যথা সময়ে সার উত্তোলনে নব্য আগমনী বার্তা দাখিল করতে হবে। এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে কার্তৃপক্ষের নির্দেশনা ব্যতীত বিক্রয় করা যাবে না। যে ওয়ার্ড অথবা ইউনিয়নের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে সেইসব জাইগায় নিজস্ব দোকান এবং গ্রদাম নিশ্চিত করতে হবে। বিসি আইসি অধীনস্থ খুচরা বিক্রেতাগণ অবশ্যই নিজ ডিলারের কাছ থেকে সার সংগ্রহ করবেন। মূল্য তালিকা লাল সালু কাপড় অবশ্যই দোকানের বাহিরে প্রদর্শন করতে হবে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে সার বিক্রয় করা যাবে না। যার নামে লাইসেন্স তাকেই ব্যবসা করতে হবে।মজুদ রেজিষ্টার ফর্মেট অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে। বিক্রয় রেজিষ্টারে অবশ্যই কৃষকের নাম এবং মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে। সার বিক্রয়ের রশিদ অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে এবং রশিদে ক্রেতার স্বাক্ষরের পাশাপাশি ক্রেতার মোবাইল নাম্বার অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে, মূল্য তালিকা অবশ্যই থাকতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন