খাগড়াছড়ি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার(১৭ই এপ্রিল) গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে দেশের ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ৪র্থ পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোসে’র চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিরন জয় ত্রিপুরা, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো: শামছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মিজ ডেজী চক্রবর্তী, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান মো: আনিসুজ্জামান ডালিম, সহকারী কমিশনার(ভূমি) মিজ নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী, মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক নাজমুস শাকিব, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান ও সাধারন সম্পাদক সুবাস চাকমা ছাড়াও পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত মডেল মসজিদের লোগো সংবলিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্তকরণ করেন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মডেল মসজিদগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া থাকবে হজ্জ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও পবিত্র কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক সম্মেলনকক্ষ। আরও থাকছে ইসলামি দাওয়াত, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র ও মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য একটি বোর্ডিং সুবিধা থাকার কথা রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন হওয়ায় খুশি স্থানীয় এলাকাবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গার সর্বস্তরের মানুষ। চতুর্থ পর্যায়ে সারা দেশে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং সিলেটের বিশ্বনাথের মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ নিয়ে পার্বত্য খাগড়াছড়ির চারটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে জেলার পানছড়ি, মানিকছড়ি ও খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১২কোটি ব্যায়ে মাটিরাঙ্গা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নির্মাণ কাজ করে ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২১সালের ১০জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, চলতি বছরে ১৬ই জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি এবং গত ১৬ই মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। চার ধাপে এখন পর্যন্ত মোট ২০০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজও শেষের দিকে।
সরকারি অর্থায়নে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯হাজার ৪৩৫কোটি টাকা। শুধু নামাজ আদায় নয়, এসব মসজিদ হবে গবেষণা ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।
মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিকব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৫৬০টি মডেল মসজিদে সারা দেশে প্রতিদিন ৪লাখ ৯৪হাজার ২০০জন পুরুষ ও ৩১হাজার ৪০০জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬হাজার ৮০০জনের। ৫৬হাজার মুসলিসবসময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।
মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে- ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর এক লাখ ৬৮হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। দুই হাজার ২৪০জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।
৪০শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলার জন্য ৩ তলা ও উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচ তলা ফাঁকা থাকবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন