সৌদি আরবে কারখানায় আগুন-‘আব্দুল্লাহ-আয়েশার বাবা আর ফিরবে না’
বাড়ির উঠোন ভর্তি অনেক মানুষ। এতো মানুষ এ বাড়িতে আর কখনো দেখেনি ৬ বছরের আব্দুল্লাহ আর তার বোন ৪ বছরের আয়েশা। তাই অপলক দৃষ্টিতে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল ওরা। কিন্তু অবুঝ এ শিশু দুটি জানে না তাদের বাবা আর বেঁচে নেই। তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে এসে তাদের কোলে নিবে না। সৌদি আরবে সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে আব্দুল্লাহ ও আয়েশার বাবা জোবায়ের ঢালী (৩৫) নিহত হয়েছেন।
জোবায়ের ঢালীর বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের সস্তাল এলাকায়। তিনি ওই এলাকার ইউনুস ঢালী ও হালানী বেগমের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৫ ভাই বোনের মধ্যে জোবায়ের সবার বড়। এছাড়াও তার পরিবারে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। অভাব অনটনের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর ২ বছর আগে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান জোবায়ের ঢালী। সেখানে গিয়ে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কারখানাটিতে আগুন লেগে জোবায়েরসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। পরে এক নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে জোবায়েরের মৃত্যুর খবর পায় স্বজনরা।
শনিবার বিকেলে জোবায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠান ভর্তি মানুষ। চলছে স্বজনদের আহাজারি। তার স্ত্রী শারমিন বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। তার কোলে ৪ বছর বয়সী শিশু কন্যা আয়েশা অপলক নয়নে তাকিয়ে ছিল।
শারমিন বেগম বিলাপ করে বলেছিলেন, আল্লাহ আমারে এ কি শাস্তি দিলো। আমার অবুঝ বাচ্চাগুলা এতিম হইয়া গেলো। ওরা এখন কারে বাবা বলে ডাকব। শেষবারের মতো ওর বাবার মুখটা দেখতে চাই।
জোবায়ের ঢালীর বাবা ইউনূস ঢালী বলেন, আমাদের সব আশা শ্যাষ হইয়া গেলো। বাবায় আমাগো সবাইরে ছাইড়া দূরে চলে গেলো। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি আমার সন্তানের লাশ যেন দ্রুত আনা হয়। আর এই অবুঝ বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাইয়া প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর পরিবারটির খোঁজ খবর নিচ্ছি। নিহতের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। এছাড়াও নিহতের পরিবার আবেদন করলে আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন