পবিত্র আশুরা শরীফ মুসলমানদের জন্য নিয়ামত

হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশারঃসকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দরুদ শরীফ ও সালাম।যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে ঈমানদের জন্য অফুরন্ত দয়া, দান ও ইহসান এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুক্তি দানের উসিলা স্বরূপ পবিত্র আশুরা শরীফ। যেমন, এই পবিত্র আশুরা শরীফ মানুষকে রুজি-রোজগারের বিষয়ে ফায়সালা দিয়ে দেন।

মানুষ সব সময়ই রুজি রোজগার নিয়ে পেরেশান থেকে থাকে।পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র আশুরা শরীফ উনার দিন যদি কোন ঈমানদার ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য ভাল খাবারের ব্যবস্থা করেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির সারা বছর ভাল খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! কেউ কেউ মনে করে থাকে ইংরেজি বা বাংলা নববর্ষের দিন ভাল খেলে সারা বছর খাওয়া যাবে, এটা কুফরী আকীদা। অসুখ-বিসুখ-অসুস্থতা নিয়ে মানুষের পেরেশানীর শেষ থাকে না।

এ প্রসঙ্গেও পবিত্র আশুরা শরীফ উনার মধ্যে নাযাত রয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, পবিত্র আশুরা শরীফের দিন কেউ যদি গোসল করে তাহলে পরবর্তী এক বছর ঐ ব্যক্তির মৃত্যুরোগ ব্যতীত কোন কঠিন অসুখ-বিসুখ হবেনা। সুবহানাল্লাহ!মানুষ অতীতের গোনাহখতা নিয়ে হতাশার মধ্যে থেকে থাকতে পারে। এই ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, যে ঈমানদার ব্যক্তি পবিত্র মুর্হরম মাস উনাকে তথা উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশুরা শরীফ উনাকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন, সুবহানাল্লাহ!

মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আশুরার ঈমানদার রোজাদারকে (পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখতে হয়) পুর্ববর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেন এবং ষাট বৎসর রাতে ইবাদত বন্দেগী ও দিনে রোজা রাখার ফযীলত দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ পবিত্র আশূরা শরীফের দিন।

এই মুবারক দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। কেননা সৃষ্টির সূচনা হয় এ দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এই দিনে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এই দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা ও এই দিনেই সংঘটিত হয়।বর্ণিত রয়েছে- আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে।

১.এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মর্যাদা, সম্মান ও খুছূছিয়ত ও হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।

২.এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া কবুল করা হয়।

৩.এ দিন মহান আল্লাহ পাক রব তায়ালা তিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম উনাকে আকাশে তুলে নেন।

৪. এ দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তিকে জুদি পাহাড়ে ভিড়িয়েছিলে।

৫. এ দিন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ হয় এবং এই দিন উনাকে খলীল উপাধি দেয়া হয় এবং উনাকে নমরূদের আগুন থেকে বের করে আনা হয় অর্থাৎ হিফাযত করা হয়।

৬.এ দিন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।

৭. এ দিন হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম তিনি অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করেন।

৮. এ দিন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি কথা বলেছিলেন এবং তাওরাত শরীফ নাযিল করেছিলেন। এ দিনেই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও উনার সম্প্রদায় লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন।

৯. এ দিন হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি মাছের পেট থেকে বের হয়েছিলেন।

১০. এ দিনই হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

১১. এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া সৃষ্টি করেন এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন।

১২. এ দিনেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি রহমতসহ সর্বপ্রথম যমীনে নাযিল হন।

১৩. এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবীতে রহমত বর্ষণ করেন।যার কারণেই এই দিনটি আমাদের সবার জন্য এক সুমহান দিন, রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত হাছিল করার দিন। ফলে এই সুমহান দিনে বেশ কিছু আমল করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা।

“রোযা রাখার ফযীলত”:পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- যরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, পবিত্র রমযান শরীফেল রোযার পর উত্তম রোযা হলো মহান খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা। (মুসলিম শরীফ)হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা বিগত এক বছরের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দেয়।

(মুসলিম শরীফ)।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররমুল হারাম রোযা রেখে ইহুদীদের বিরোধিতা করো। (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)

■ রোযাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত:পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেন সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেই ইফতার করালো। সুবহানাল্লাহ!

■ পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানোর ফযীলত:পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে পরাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরবানী শরীফ)

■ গরিবদের পানাহার করানো ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো:পবিত্র আশূরা শরীফ উনার মধ্যে গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন কোনো মুসলমান যদি কোনো ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে এবং কোনো ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোনো পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং সালসাবীল ঝর্ণা থেকে পানীয় তথা শরবত পান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!

■ চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়ার ফযীলত:
পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়ার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মেশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে সেদিন থেকে পরবর্তী এক বৎসর ওই ব্যক্তির চোখে কোনো প্রকার রোগ হবে না। সুবহানাল্লাহ! (শুয়াবুল ঈমান)

■ গোসল করার ফযীলত:পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন গোসল করবে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ওই ব্যক্তিকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত ওই ব্যক্তির কোনো কঠিন রোগ হবে না এবং ওই ব্যক্তি অলসতা ও দুঃখ কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।

সুবহানাল্লাহ! রিযিকের ফায়সালা হয়ে গেল, অসুখ-বিসুখ দূর হয়ে গেল, গোনাহখতা মাফ হয়ে গেল এবং জান্নাত লাভ হল। বাকী থাকলো কী? দেখা যাচ্ছে যে, পবিত্র আশুরা শরীফ মানুষের অত্যাবশ্যক বিষয়গুলোর সুষ্ঠু ফয়সালা ও নাযাতের উছীলা স্বরূপ। তবে যে বিষয়টা খেয়াল করা দরকার তা হচ্ছে, যথাযথভাবে মহাসম্মানিত সুন্নতী তর্জ-তরীকায় পবিত্র আশুরা শরীফ পালন করতে পারলেই নিয়ামতরাজীর পরিপূর্ণ হিস্যা লাভ করা সম্ভব হবে।

ঈমানদারগণ যাতে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক যথাযথভাবে আদায় করে পবিত্র আশুরা শরীফ পালন করতে পারেন সে লক্ষ্যে যামানার ইমাম, ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তা’লিম মুবারক দিচ্ছেন, একটি লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে এবং দৈনিক আল-ইহসান শরীফ পত্রিকায় এ ব্যাপারে আলোচনা করা হচ্ছে।

বিষয়গুলো জেনে-শুনে যথাযথভাবে পালন করার কোশেশ করতে হবে। মহান আল্লাহপাক তিনি ঈমানদার সবাইকে যামানার ইমাম ও মুযতাহিদ হযরত মুজাদ্দিদে আযম মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালামের উসিলায় পবিত্র আশুরা শরীফ উনার যথাযথ আদব রক্ষা ও তা’যীম-তাকরীম করে পালন করার যেন তাওফীক্ব দান করেন। আমীন!