আহত বিএনপি নেতা গয়েশ্বরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গয়েশ্বরকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে ধোলাইখাল এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
তখন অবশ্য পুলিশ বলেছিল, গয়েশ্বরকে ‘চিকিৎসার’ জন্য পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিংয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির ছোড়া ইট-পাটকেলে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সেই ঢিল বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্রের গায়েও লেগেছিল। পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে তুলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনে। পরে তাকে নিরাপদে নয়াপল্টন কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় মামলা হবে। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, তারা এমন একটু অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সেই অনুযায়ী আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। কিন্তু তারপরও তারা যেভাবে পুলিশের ওপরে হামলা করেছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক’, যোগ করেন হারুন অর রশীদ।
এদিন রাজধানীর নয়াবাজার (বাবুবাজার ব্রিজের প্রবেশ মুখ) মোড়ে বিএনপি অবস্থান নেয়ার কথা থাকলেও এর বদলে ধোলাইখাল মোড়ে অবস্থান নেয় দলটি। সেখানে বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। জবাবে ইট-পাটকেল ছোড়েন অবস্থানকারীরা।
সেখান থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি জাফর হোসেন।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দুপুর ১২টার দিকে ধোলাইখাল মোড়ের একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন গয়েশ্বর। সেখান থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বরকে রাস্তায় ফেলে পেটালো পুলিশ (ভিডিও)
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পুলিশের বাধার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরই অংশ হিসেবে ধোলাইখাল থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়কে আটক করেছে পুলিশ।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কর্মীদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গয়েশ্বর। এ সময় তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সংযত করার চেষ্টা করছিলেন। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে আটকের চেষ্টা করে। তবে গয়েশ্বরকে ছাড়তে চাচ্ছিল না কর্মীরা। তাই তাদের আলাদা করতে গয়েশ্বরসহ কর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে পুলিশ। এ সময় কর্মীরা তাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। গয়েশ্বর পুলিশের লাঠির আঘাতে রাস্তায় পড়ে যান। তিনি পড়ে যাওয়ার পরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য গয়েশ্বরকে পেটাতেই থাকেন। পরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে পুলিশ সদস্যদের নিবৃত্ত করেন। এ সময় গয়েশ্বরের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
গয়েশ্বর ছাড়াও এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আটক হয়েছেন।
গয়েশ্বরকে পেটানের যে বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
রাজধানীর ধোলাইখালে আজ শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করেছে পুলিশ। এর পর কয়েক দফা সংঘর্ষ চলে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে দিয়ে সাপ পেটানোর মতো করেপেটানো হয়েছে বলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, প্রথমে ধরে নিয়ে এসে পেটানো হয়। এর পর রাস্তায় পড়ে গেলে সেখানে সাপের মতো পেটানো হয়।
সরজমিন দেখা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসে পুলিশ। তাদের ঘিরে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। এর পর বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে আটক থাকা বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে লাঠিপেটা শুরু করে।
এতে বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম আজাদসহ আটক থাকা নেতারা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মার থেকে রক্ষা করতে আসেন। পুলিশ সদস্যরা তাদেরও লাঠিপেটা করে। এক পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লুটিয়ে রাস্তায় পড়লেও কয়েজন পুলিশ সদস্য মারতেই থাকেন। তখন অন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য বাধা দেয়। এর পর গয়েশ্বর চন্দ্রকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
রাজধানী ঢাকার ধোলাইখালে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এদিন ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে বিএনপির অন্তত ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন