জোড়া থেকে আলাদা সেই মনি-মুক্তা পা দিল ১৫ বছরে

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর বাংলাদেশী চিকিৎসক ডাঃ এ—আর খানের সফল অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে জোড়া লাগা দু—বোন পৃথকীকরণ এক অনন্য সাফল্যের ইতিহাস।মনি—মুক্তা এখন ১৫ বছরে।

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পাল ও কৃষ্ণা রানী পাল দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে জোড়া লাগা দুই জমজ সন্তান। জন্মের পরপরই সমাজ যাদের নামে কুৎসা রটনা ও অভিশপ্ত ফসল বলে অবজ্ঞা করেছিল। সেই দুই শিশু আজও সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ১৫ বছরে পা দিয়েছে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে ।মনি— মুক্তা দু—জনেই এখন ঝাড়বাড়ী দ্বি মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ ম শ্রেনীর ছাএী, অন্য ১০ জনের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে তারা।তাদের বাবা জানিয়েছেন প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও (২২শে আগস্ট) মনি মুক্তার জন্মদিন পালন করবে তার পরিবার।

এই উপলক্ষে তার নিকট আত্নীয় স্বজন, শিহ্মক, মনি মুক্তার বন্ধুদের ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হবে। মনি মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, ভগবানের আশীর্বাদে অপারেশন হওয়ার এযাবতকাল পর্যন্ত তারা সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। লেখাপড়া পাশাপাশি দু —বোন নাচ এবং চিত্রাংকনে পারদর্শী। দু—বোন উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।জন্মদিনে সকলের কাছে আশীর্বাদ চেয়ে মনি মুক্তা জানায়, আমাদের স্বপ্ন লেখাপড়ায় উচ্চশিহ্মায় শিহ্মিত হয়ে ডাক্তার হবো, মানুষের সেবা করবো।

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ শে আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয় পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০শে জানুয়ারী ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি—মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।অতঃপর ২০১০ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি—মুক্তা ভিন্ন সত্তা লাভ করে। যেটা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।

মনি—মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, জন্মের সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়ি। নানা অপবাদের ভয়ে গ্রামে আসিনি।হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি—মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডাঃ এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির সফল চিকিৎসায় আমাদের দুই সন্তানের নতুন জীবন ফিরে পাওয়া। মনি—মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফ্রেরুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি।কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি—মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টি কর্তার আর্শিবাদে এবং ডা. এ আর খানের সু—চিকিৎসায় আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেয়েছি।

আমরা সব কষ্ট ভূলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি—মুক্তা এবং তার পরিবারের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি।মনি—মুক্তারা তিন বোন একভাই সজল কুমার পাল জেলার খানসামা কলেজ হতে বাংলা বিভাগে অনার্স পাশ করছেন এবং বড় বোন দিশাপাল বীরগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বলে জানিয়েছেন তার বাবা জয় প্রকাশ পাল। মনি মুক্তার জোড়া থেকে পৃথকীকরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।