লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে রেললাইনের পতিত জমিতে ভূমিহীন কৃষকের সবজি চাষ

সফিয়ার রহমানের জমি নেই। কাজ করেন দিনমজুরের। তিন বছর আগে পা ভেঙেছেন দুর্ঘটনায়। এখন স্থানীয় একটি বিল পাহারার কাজ করছেন। ৪ সন্তানের জনকের ৮ জনের টানাপড়েনের সংসার। অভাবের ঘরে আলো হয়ে প্রবেশ করেছে পতিত জমিতে সবজি চাষ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ভূমিহীন এই কৃষককে সড়ক ও রেললাইনের ধারে ফাঁকা জায়গায় সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পেয়েছেন সাফল্য। নাম মাত্র খরচ করে ১৫ হাজার টাকার আগাম জাতের লাউ বিক্রি করেছেন কয়েকদিন আগে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারির এই ভূমিহীন কৃষক রেল লাইনের দুধারের পতিত জমিতে এবার এক কিলোমিটারজুড়ে চাষাবাদের আওতায় এনেছেন। সেই জমিতে মাচায় লাউ, ঝিংগা, সিম চাষ করছেন। মাটিতে মিষ্টিকুমড়ো, মিস্টি আলু জাতীয় ফসল লাগাচ্ছেন। একই জমিকে কয়েকভাবে ব্যবহার করছেন। পরিকল্পনা করেছেন মাচার আলোযুক্ত জমিতে আদা, হলুদ জাতীয় ফসলের চাষ।

ভূমিহীন কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘তিন বছর আগে দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেছে। এখন তেমন জোরের কাজ করতে পারি না। রেললাইনের ধারের বিল পাহারা দেই। প্রথমে সড়কের পাশে লাউ লাগিয়েছিলাম। ১৫ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। এখন রেললাইনের দুধারের ফাঁকা জায়গায় চাষ শুরু করেছি। আমার বাড়িতে মাত্র তিন শতাংশ জায়গা। কোনো রকম ঘর করে থাকি। অসুখের সময়ে উপজেলা থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তারপর আর কেউ খোঁজ রাখেনি। ৭০ হাজার টাকার নেট বাঁশ কিনেছি। পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল। আজকেও তিনি সব রকম বীজ সার দিয়েছেন। বর্তমানে আমার কিছু নেট আর চালকুড়ার বীজের সংকট আছে।’

কালীগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাকে বিল পাহারা দিতে দেখি। প্রথমে সড়কের ধারে লাউ চাষ করে সাফল্য পান। সেই সময় লাউ চাষে তেমন কোনো খরচ হয়নি। কিন্তু ভালো দামে লাউ বিক্রি করেন। তাকে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে দুইবার ট্রেনিং করানো হয়েছে। তিনি ভূমিহীন। তাকে পরে রেললাইনের ধারে সবজি চাষ করতে বলি। আশা করছি আবারও তিনি ভালো ফলাফল পাবেন।’

স্থানীয় শিক্ষক রায়হান শরিফ বলেন, রেল, সড়ক বিভাগসহ অনেক দপ্তরের পতিত জমি থাকে। কৃষি দপ্তর চাইলেই ভূমিহীন কৃষকদের মাধ্যমে সেসব জায়গার সঠিক ব্যবহার করতে পারে। এতে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হবে, দেশ তার থেকে বেশি লাভবান হবে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি দপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করছি। উঁচুনিচু কোনো জায়গা যেন পতিত অবস্থায় না থাকে। যেখানে যে ফসল হয়, সেখানে সেই ফসলের চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করছি।’