মৎস্যভাণ্ডার চলনবিলে মাছের সংকট: কমে যাচ্ছে শুটকির উৎপাদন
দেশের মৎস্যভাণ্ডারখ্যাত ঐতিহ্যবাহী চলনবিলে ভরা মৌসুমেও খুব বেশি মাছের দেখা মিলছে না। ফলে শুঁটকির উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শুঁটকির ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর, দেলবার হোসেন, আলম ও নান্নু বলেন, চলনবিলের মহিষলুটি মৎস্য আড়তের আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিল। এবছর মাত্র ৫টি চাতালে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন ২০ জন ব্যবসায়ী।
শুঁটকির ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রতিদিন একটি শুঁটকির চাতালে ৩০০ মন মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও মৎস্য আড়ত ঘুরে ৩০-৫০ মণের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দশক আগেও চলনবিলে প্রচুর পরিমাণ ছোট মাছ পাওয়া যেত। আর এ মাছ আশ্বিন থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত আরও বেশি পাওয়া যেত। এ অঞ্চলে কাচা মাছের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত মাছ স্বল্প মূল্যে কিনে শুটকি তৈরি করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অনেক শুটকি চাতালের মালিকরা লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতেন।
আরেক শুটকি চাতাল মালিক আমজাদ হোসেন জানান, এ বছর বিলে মাছ নেই বললেই চলে। বেশ কিছুদিন যাবৎ শুটকি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পানি নামার নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এ সময় দামও কম থাকে। এই সব মাছ দিয়ে চলে শুটকি তৈরির ধুম পড়ে। কিন্তু এখনই মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাতাল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছেন, বিলের বিস্তীর্ণ মাঠের অনেক জায়গাতে এখনো পানি রয়ে গেছে। বিলের পানি একেবারে নেমে যাওয়ার সময় বেশি মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুঁটকির চাতালের বেশিরভাগ চাটাই খালি পড়ে আছে।
সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের শ্যামল হোসেন, আব্দুল কাদের ও বারিক মণ্ডল নামের তিনজন মৎস্যজীবী বলেন, বর্ষায় চলনবিলে মাছ ধরে সংসার তাদের। কিন্তু বিলের পানিতে তেমন মাছ নেই।
জানা যায়, চলনবিলের মিঠা পানির পুঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, ইচা, টেংড়া, গুচি, ক্যাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছের শুঁটকির কদর রয়েছে দেশ ও বিদেশে।
আমেনা খাতুন, কমেলা খাতুন, জোসনা পারভীন, চম্পা পারভীন, সাজেদা বেগমসহ বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, শুঁটকির চাতালের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এ বছর মাছের অভাবে অনেকের কর্মহীন দিন কাটছে।
মহিষলুটি মাছের আড়তের ইজারদার মোহাম্মদ আলী বলেন, চলনবিলের মাছের শুঁটকি সুস্বাদু হয়। দিনে দিনে বিলে মাছ কমে গেলেও দেশে-বিদেশে শুঁটকির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উন্নত মানের শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ বলেন, বর্ষা মৌসুমের কয়েক মাস মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে চলনবিলে। এতে সুফল পাবেন মৎস্যজীবীরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন