মাদারীপুরের ডাসারে সেতু নির্মাণে জমি নিয়ে জটিলতা

মাদারীপুরের ডাসারে ৮০০ মিটার সংযোগ সড়কসহ ২৮মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি। স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যক্তি জমিতে। এ ছাড়াও পাশাপাশি 8০ মিটারের মধ্যে আরও একটি সেতু রয়েছে। ফলে এখানে নতুন করে কোন সেতু প্রয়োজন নেই। সেতুটি মাদারীপুর-বরিশাল দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ডাসার এলাকায়। এই এলাকার ব্যবাইজ্জার খালের উপর ৮০০ মিটার সংযোগ সড়কসহ ২৮মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ইসলামের সঙ্গে জমি নিয়ে শুরুতে জটিলতা সৃষ্টি থেকে এখন মামলায় জড়িয়েছে ঠিকাদার।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (এমএসআরডি) প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৭ টাকা ব্যয়ে 800 মিটার সংযোগ সড়কসহ ২৮ মিটার সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। দরপত্র অনুযায়ী সর্বনিম্ন মূল্যে কাজ পান পিরোজপুরের ইফটি. ইটিসিএল (প্রা:) লিমিটেড। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট স্থানীয় ঠিকাদার সৈয়দ মোবাশ্বের আলী বিপ্লব সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পান। ঠিকাদার সেতু নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় বাবুল ইসলাম নিজের জমি দাবি করে নির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদান করে। এ ঘটনা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উভয়ের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ইছাকুড়ি বাকাই মৌজার ৪ নম্বর খতিয়ানে বিআরএস ২৯ নম্বর দাগটি সম্পুর্ণ সরকারি রাস্তা। রাস্তার পূর্বে গৌরনদী ও পশ্চিমে ডাসার উপজেলা। যাহা ব্যবাইজ্জার খাল নামে পরিচিত। ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ওই খালের উপর বেসরকারি সংস্থা সংযোগ সেতু নির্মাণ করেছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল কাসেম। এদিকে গৌরনদী ভূমি অফিস থেকে বলা হয়েছে বাবুল ইসলামের জায়গা আর সেতু জায়গা এক নয়। এ ছাড়াও এস.এ ও বি.আর.এস রেকর্ড অনুযায়ী ওই জায়গার মূল মালিক বন্দনা রানী মন্ডল, অনুকুল কুলু, কালীপদ বাড়ৈ।

স্থানীয় ঠিকাদার সৈয়দ মোবাশ্বের আলী বিপ্লব বলেন, আমরা ইছাকুড়ি বাকাই মৌজার ৪ নম্বর খতিয়ানে বিআরএস ২৯নং দাগের ৭২ শতাংশ জায়গায় ২৮মিটার ব্রীজটি বাস্তবায়ন করতে গেলে বাবুল ইসলাম তাঁর পরিবার নিয়ে ভোগ দখলের উদ্দেশ্যে বেআইনিভাবে ব্রীজ নির্মাণে বাঁধা প্রদান এবং এক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অনাগ্রহ জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা মোকদ্দমা, হুমকি ধামকিসহ নানা ভাবে হ্যারেজ করতেছে। পরে কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দেই। সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি জানাচ্ছি।

চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শে ঠিকাদার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে জেল হাজত খাটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংযোগ সড়কসহ ব্রীজের জায়গা আমার বিআরএস রেকর্ড ও দখলীয় সম্পত্তি। আমার সব কাগজপত্র আছে। দলিল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন দলিল কোর্টে রয়েছে। পরে আপনাকে দেখাতে পারবো। গৌরনদী ভূমি অফিসের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন সার্ভেয়ার সঠিক রিপোর্ট দেয় নাই।

তিনি আরও জানান, সরকার সেতুটি নির্মাণ করলে আমাদের ৪০ শতাংশ জমি চলে যায়, এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। তাই আমরা চাই এখানে সেতুটি যাতে না হয়। আর যদি সেতু একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে জমি অধিগ্রহণ করে সেতু করুক। নতুন সেতু করলে জনগণের কোন উপকার আসবে না। উপকার আসবে ঠিকাদার আর প্রকৌশলীর। উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল সাহেব ও ঠিকাদার আতাত করে টাকার বিনিময়ে এই কাজটি করছে। চীফ ইঞ্জিনিয়ার ৭-৮ বছর আগে বলেছিল এতো কাছে সেতু হয় না। পিডি ও নির্বাহী প্রকৌশলী নিষেধ করার পরও উনি সেতুটি করছে। আমি এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার চাই। এছাড়াও আমি উচ্চ আদালতে মামলা করবো।

এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ১/১ খাস খতিয়ান ভুক্ত খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের সরকারি জায়গায় ব্রীজ নির্মাণ হচ্ছে। পাশেই সওজের স্লুইস গেট দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে না পারায় জনস্বার্থে জনপ্রতিনিধির চাহিদায় এই ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি খাল ও হালটের জায়গায় ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে। উনি ব্যক্তি স্বার্থ ও হীন স্বার্থ চরিত্রার্থ, স্থানীয় দ্বন্দ্ব হাসিল করার জন্য জনস্বার্থ রহিত করছেন। ওনার জায়গা থাকলে এটা প্রমাণ করবে। সরকার যদি তার জায়গায় ব্রীজ নির্মাণ করে, সেটা প্রমাণ করতে পারলে উনি ক্ষতিগ্রস্থ হলে সরকার যৌক্তিক ক্ষতিপুরণ দিয়ে দিবেন। উনি তো নানা জায়গায় নানা অভিযোগ হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।