কুড়িগ্রামে পবিত্র রমজানে অটোরিকশা চালক সাঈদুলের মানবিকতা
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে অটোরিকশার নিদিষ্ট ভাড়া থেকে ৫ টাকা ছাড় দিয়েছেন এক চালক। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় টাঙানো এমন একটি ব্যানার নজর কেড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের। বিষয়টি সামান্য মনে হলেও এর মহত্ত অনেক বেশি।
কেননা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পবিত্র রমজান মাস জুড়ে সামান্য আয়ের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ভাড়া কমিয়েছেন সাঈদুল ইসলাম (৩৬) নামের এই অটোরিকশা চালক।
যে কেউ যাত্রী হয়ে তার অটোরিকশায় উঠে গন্তব্যে পৌঁছার পর নিদিষ্ট ভাড়ার চেয়ে তিনি কম নিচ্ছেন ৫-১০টাকা পর্যন্ত। আর এ জন্য তার অটোরিকশায় সামনে-পিছনে ব্যানার করে লাগানো হয়েছে ডিসকাউন্টের অফার।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অটোরিকশায় টাঙানো যাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি অটোরিকশার টাঙানো ব্যানারে লিখেছেন, “পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিদিষ্ট ভাড়া থেকে ৫ টাকা ছাড়”। সেই ছবিতে একজন লিখেছেন, এইরকম মহৎ কাজ এই যুগে কে করে?
রবিউল ইসলাম নামের আরও একজন লিখেছেন, “এভাবে সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসে একদিন সব সম্ভব”। আসাদ নামের আর একজন লিখেছেন, “এখন আমাদের উচিৎ অটোরিকশা চালক ভাইকে ৫ টাকা বেশি বকশিস দেওয়া”।
ওই অটোরিকশা চালক সাঈদুল ইসলাম (৩৬) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনী বাড়ী ইউনিয়নের রুপার খামার এলাকার বাসিন্দা। সংসার জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। ছেলে স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।
এ বিষয়ে কথা হলে অটোরিকশা চালক সাঈদুল ইসলাম বলেন, আমি রমজান মাসের আগে ফেসবুকে দেখেছি সৌদি আরবের একটি দোকানে রমজান উপলক্ষে কেনাকাটা করলে ৪০% ছাড় দিচ্ছে। এটা দেখে চিন্তা করলাম, আমি আসলে রমজান মাসে মানুষের জন্য কি করতে পারি। আমার তো আর কোন সামর্থ্য নাই, তাই যেহেতু আমার একটি অটোরিকশা আছে তাহলে অটোরিকশার যাত্রীদের জন্যে ছাড়ের ব্যবস্থা করি। এই চিন্তা থেকে আসলে আমার এটা করা। আমার এই ছাড় যাত্রীদের জন্য পুরো রমজান মাস জুড়েই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আগে আমি ঢাকায় একটা কোম্পানিতে চাকুরী করতাম। পরে বাড়িতে এসে গত ১০-১২ বছর থেকে অটোরিকশা চালাই। এই অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলে আমার।
আমার এই ছাড়ের বিষয়টি দেখে অন্যন্য অটোরিকশা চালকরা আমাকে অন্যায় কথাবার্তা বলছে। তবে আমি কিছু মনে করছি না। আমার অটোটি চালাচ্ছি, চিলমারী উপজেলা হতে কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও রাজারহাট রোডে। যেমন উলিপুর থেকে জনপ্রতি কুড়িগ্রাম ৩০টাকা ভাড়া, আর আমি বর্তমানে ভাড়া নিচ্ছি ২০-২৫ টাকা।
কলেজ ছাত্র মাহমুদ হাসান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে অটোরিকশা চালক ভাই যাত্রীদের জন্য যে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছে। এটা আমার কাছে মানবিক কাজ মনে হচ্ছে। তার দেখাদেখি আরও অন্যরা বিভিন্ন ভাবে রোজাদারদের জন্য এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা আমার।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের এরশাদুল হক নামের একজন বলেন, পবিত্র রমজান মাসে একজন অটোরিকশা চালক যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে আসলে তিনি প্রশংশার দাবি রাখেন। বিষয়টি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই ভাইটির জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
পবিত্র রমজানে ত্যাগের মহিমায় সকলে উজ্জ্বীবিত হোক্ এই হোক ব্রত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন