‘সুযোগ’ রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের যাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে বিএনপি। তবে প্রার্থীরা শোকজের জবাব দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে দল তাঁদের বিষয়ে কঠোর না-ও হতে পারে। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ‘সুযোগ’ রেখে প্রার্থীদের শোকজের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল।

এর পরও দলের দায়িত্বশীল নেতারা প্রার্থীদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। তাঁরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন দলের নেতারা। তাই কারো বিরুদ্ধে দল কঠোর হতে চাইছে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ৬৩ জন প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ২৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ২১ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৯ জন।

৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে গত মঙ্গলবার রাত থেকে প্রার্থীদের শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত শোকজ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতা হিসেবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আপনার এমন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে পত্রপ্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, শোকজের চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে তৃণমূলে বার্তা দিতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘যাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি তাঁরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলে দল তাঁদের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৩৪ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পদধারী নেতারা মাঠে আছেন। এর মধ্যে আট উপজেলায় ১৯ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৫ জন নেতা। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন এমন চারজন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে একজন দল পরিবর্তন করেছেন।

দলীয় সূত্র আরো জানায়, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ২৪ উপজেলায়। এর মধ্যে চার উপজেলায় ১০ নেতা ভোটে রয়েছেন। মোট ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৯ জন নেতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯টি উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে একজন প্রত্যাহার করেছেন, এখনো ভোটের মাঠে আছেন ১৯ জন নেতা।