তেঁতুলিয়ায় ল্যান্ডকো কোম্পানির মামলার ভয়ভীতিতে এলাকাবাসী আতঙ্কে

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ল্যান্ডকো নামীয় কোম্পানির সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নামে জমি দখলের পাঁয়তারাই মিথ্যা মামলার ভয়ভীতিতে এলাকাবাসী আতঙ্কে অনেকেই ঘর ছাড়া হয়েছেন বলে কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের শেখগছ এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মৌসুমী কৃষি খামারের আড়ালে ফসলি জমিতে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করছে ল্যান্ডকো নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। সোলার পাওয়ার প্লাট স্থাপনের নামে ল্যান্ডকো নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি দেবনগড় ইউনিয়নের শেখগছ এলাকায় ২০১৭ সালে জমি কিনতে শুরু করেন।

এসময় স্থানীয় অনেকে তাদের জমি কোম্পানীটির কাছে বিক্রিও করেন। তবে দীর্ঘদিন পরে কোম্পানীটি জমি দখলে নিতে এসে কৃষকের অবিক্রিত ফসলী জমির মরিচ, গম, পেয়াজ সহ নানা ফসলের উপর ট্রাক্টর চালিয়ে ফসল হানি করে জমি দখলে নিচ্ছে। এমনকি স্থানীয়দের বসত বাড়ির গাছপালা কেটে বাড়ী উচ্ছেদ করতে ব্যবহার করছে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদেরও। এ নিয়ে স্থানীয়রা কোম্পানীর লোকজনের সাথে আলোচনায় বসতে চাইলেও কোন সদুত্তর মেলেনি। অভিযোগ করলে উল্টো দেয়া হয় হুমকী ও মামলা।

এক পর্যায় চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে ৩টি ট্রাক্টর ও বেশ কিছু লোকজন নিয়ে জমি দখলে নিতে আসেন প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জহির। পরে প্রায় ৪ শতাধিক কৃষক ও স্থানীয় লোকজন তাদের বাধাঁ প্রদান করেন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হলে একপর্যায়ে বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর এলাকাবাসী ও কোম্পানির মধ্যে জমাজমি নিয়ে দ্বন্দ্ব মিটাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন যার তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, উপজেলার শেখগছ মৌজার জে.এল নং ৩২ এর সিএস ১২৫৭ এস.এ ৪০৭ নং খতিয়ানের সি.এস ৫৯৯ এস.এ ২১৬০ নং দাগে রেকর্ডর্ীয় মালিক পারমদ্দিনের কাছ থেকে মশির উদ্দীন ওরফে বাচ্চা মদ্দিন, আব্দুল গণি, আব্দুল হক ও তালেব আলী গত ১৯৬৩ সালের মে মাসের ১৩ তারিখ ৪২২৮ নং দলিল মূলে ১২শতক জমি ক্রয় করেন। দাগের পশ্চিামাংশে ক্রয়কৃত জমি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন শিমু। উক্ত ক্রয়কৃত আব্দুল গণির ছেলে নুর আলম সিদ্দিক শিমু এই প্রচন্ড তাপদাহে তার খেত দেখাশুনা ও আরাম আয়েশের জন্য খড়ের তৈনি একটি ঘর উত্তোলন করলে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কোম্পানির লোকজন ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হলে থানা পুলিশ সেই মোটরসাইকেল দুটি থানায় না নিয়ে কোম্পানির লোকজনদের দিয়ে দেন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এরপর নুর আলম সিদ্দিক বাদী হয়ে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) ল্যান্ডকো নামে কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জহির সহ ১৬জনকে আসামী করে বিজ্ঞ আমলী আদালত—৪, তেঁতুলিয়া পঞ্চগড়ে একটি সিআর মামলা করেন। যার মামলা নং—৭৩/২০২৪।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, এলাকাবাসীকে ফাঁসাতে ল্যান্ডকো নামের ওই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিরা গত মঙ্গলবার ভোর রাতে তাদের অফিসের পিছনে খড়ে আগুন ও অরক্ষিত ঘরের ভিতরে সোয়ার খাটে ঝাঁপসা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটিয়েছেন। এলাকাবাসী ফসলী জমি রক্ষার্থে এবং এই বানোয়াট মিথ্যা ঘটনার সুবিচার চেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার আগুনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, ল্যান্ডকো কোম্পানি অফিসের দক্ষিণ পার্শে সম্পূর্ণ ও অর্ধভাবে পুড়ে যাওয়া খড়ের চিত্র চোখে পড়ে। তবে অফিসের টিনে কোন পুড়ার চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যদিকে ল্যান্ডকোর অফিস বাদে আরেকটি অরক্ষিত ঘরের ভিতরে খাটে ঝাঁপসা পুড়া দাগ ও একটি পাল্লা পুড়ে যাওয়ার রহস্যময় চিত্র চোখে পড়ে।

ল্যান্ডকো নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মিজানুর শিবলী সাদিকরা কোম্পানির জমিতে ঘর উত্তোলন করলে, কোম্পানির লোকজন ভদ্রতার সহিত কেন ঘর উত্তোলন করা হচ্ছে বলতে গেলে তাদের আটকে রেখে মারধর করা হয়। ভাগ্য ভালো আমাদের লোকজন চলে আসতে পেরেছে শুধু দুজন মোজাফফর ও আজিমুল আসতে না পেরে তাদের বেধরক মারধর করছে। অন্যদিকে অফিসের আগুন লাগানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেন মাঠ ছেড়ে চলে যায় এজন্যই তাঁরা (শেখগছবাসী) এসব করছে। তিনি আগুন লাগানোর বিষয়টি পৌণে ৫টায় জানতে পারেন। সেখানে কোম্পানির সিকিউরিটি মিজান ও গনি ছিলেন জানান তিনি।

ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি কয়েকবার সালিশ করেছি কোম্পানি ওই জমির কোন দলিল দেখাতে পারেন নাই। কোম্পানির প্রতিনিধিরা অন্যায়ভাবে জমি দখলের পাঁয়তারায় লিপ্ত আছেন। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জমি দখলের পাঁয়তারা বন্ধ থাকায় এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষদের হয়রানি শুরু করছেন। আমি একজন ইউপি সদস্য আমাকেও মামলায় জড়িয়েছেন। কোম্পানির বানোয়াট অসত্য মূলক মামলা হতে অব্যহতি চেয়ে আদালতের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় গত শনিবার (২০ এপ্রিল) ঘটনার বিষয়ে বলেন তাদের জমাজমি নিয়ে দ্বন্দ্ব এলাকাবাসি ঘর তুলেছেন কোম্পানির লোক এতে বাধা দেন জানা গেছে। এলাকাবাসী মধ্যে মিজানদের ঘরে কোম্পানির লোক আগুন লাগিয়েছেন এবং কোম্পানির লোকদের মারধর করা হয়েছে জানা গেছে। এদিকে গত মঙ্গবার (৩০ এপ্রিল) ঘটনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ল্যান্ডকোর অফিসে আগুন লাগিয়েছে অবগত আছেন। অবগত হওয়ার পর জানতে পারেন অফিসের বাহিরে খড়ে আগুন লাগিয়েছে তবে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়েছে তা জানতে পারা যায়নি। ঘরে কোন আগুন লাগেনি এবং পুড়ে যায়নি। কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স এর স্টেশন অফিসার সোহরাব হোসেন বলেন, কোনো ঘর পুড়ে নাই। অফিসের ঘর নির্মাণের জন্য যে খাড়িয়া রাখা ছিল সেগুলোতে আগুল লাগছিল এবং অন্য আরেকটি ঘরের একটি খাটে আগুন লেগে একটি পাল্লা পুড়ে গেছে ঘর কোনো আগুন লাগেনি। আলামত হিসেবে বোমার মতো কিছু পাওয়া গেছে এবং ৫লিটার বোতলে দেড় লিটারের মতো ডিজেল পাওয়া গেছে। সেগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।