ডিবি পরিচয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণ, পুলিশ হেফাজত থেকে ধর্ষক নিরুদ্দেশ!

রংপুরের মিঠাপুকুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নাবালিকা এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার পর বিয়ের প্রলোভণে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে আটকের একদিন পর মিঠাপুকুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। পরে রহস্যজনক কারনে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ হেফাজত থেকে ধর্ষক নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

বুধবার (১৯ জুন) মিঠাপুকুরের গোপালপুর ইউনিয়নের বগেরবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরপূর্বে ১৮ জুন (মঙ্গলবার) ওই ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী যুবককে আটক করে রাখেন স্থানীয়রা।

নাবালিকার বাবার অভিযোগ, তার নাবালিকা কন্যা (১৪) এর সঙ্গে মিঠাপুকুর উপজেলার ১৪ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্ব চিথলীপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের পুত্র মোঃ আশিকুর রহমান ওরফে সাগর (২৫) ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় বছর খানেক পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। একসময় বিয়ের প্রলোভণে ওই নাবালিকাকে দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গায় এবং স্থানে নিয়ে গিয়ে কৌশলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ঘটনার দিন, মঙ্গলবার (১৮-জুন) আবারো ওই নাবালিকাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে নাবালিকার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে ধর্ষক অভিযুক্ত আশিকুর রহমানকে আটক করেন।

নাবালিকার অভিযোগ, ধর্ষক নিজেকে সাগর নামে ডিবি পুলিশের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে তাকে ধর্ষণ করে আসছে। আটকের পর থানায় গিয়ে জানতে পারেন তার নাম আশিকুর। ইতিপূর্বে তার বিয়ে হয়েছে এবং সে দুই সন্তানের জনক। তিনি ধর্ষকের শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষক আশিকুর রহমানকে আটক দেখিয়ে ভিকটিম এবং তার অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরেও মিঠাপুকুর থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করতে কালবিলম্ব করায় গভীর রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপে বাধ্য হয়ে বিচারের নামে ওই নাবালিকা এবং তার পরিবারকে একটি বৈঠকে উপস্থিত করে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে বলে নাবালিকা এবং তার বাবা অভিযোগ তুলেছেন। তবে থানায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে অভিযোগ দাখিলের পর ভিকটিম এবং ধর্ষণের অভিযোগে আটক আশিকুর রহমান কিভাবে স্থানীয় সার্লিশ মিমাংসায় উপস্থিত হলেন তার দায় কেউ স্বীকার করেনি।

নাবালিকা জানান, ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে থানায় গেলাম। কিন্তু আমাকে পাঠানো হলো এক জনপ্রতিনিধির বাসায়। শেষে তারা ঠিক করলো আমাকে দেড় লাখ টাকা দেবে? আমাকে তারা পতিতা বানিয়ে ছাড়লো। মৃত্যু ছাড়া আমার কোনো রাস্তা নেই। নাবালিকার পিতা বলেন, যেখান থেকে ফোন এসেছিল, তার কথা অমান্য করার শক্তি মিঠাপুকুরে কারো নেই। এটা কি ন্যায় বিচার! এমনকি ধর্ষণের ঘটনায় মিমাংসার দেড় লাখ টাকা বাকী রাখা হয়েছে বলে বাদীর অভিযোগ।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, একবছর পূর্বে তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। হয়তোবা এতদিন তারা অভিযুক্তের অন্য পরিচয় জানতেন। পরে সঠিক পরিচয় জানার পর ইউনিয়ন পরিষদে সার্লিশ নেন। সেখান থেকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসেন। তার দাবি, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ভিকটিম এবং অভিযুক্তকে যথাযথ নিয়ম মেনেই জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বাদীকে বারবার বলা হয়েছে, কিন্তু সে মামলা করতে চায়নি। গোপালপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনর রশীদ হারুন বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই, আমি সেদিন ইউনিয়ন পরিষদে ছিলাম না।