কর্মচঞ্চলতা ফিরলেও জনমনে ভয়-আতঙ্ক কাটেনি
কোটা আনন্দোলনের পর সরকারের সান্ধ্য আইন চলমান থাকায়। গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে। এমন দৃশপট দেখেই দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত এবং বিভিন্ন সেক্টরের সাধারণ কর্মজীবী মানুষেরা আবারও তারা কর্মচঞ্চলতায় ফিরেছেন।
এ দিকে দেশের সব চেয়ে বৃহৎ শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের সকল মিল কারখানার মালিকরাও তাদের কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু করেছেন। এতে করে এ শিল্পাঞ্চলের লাখ-লাখ শ্রমজীবী মানুষেরা তাদের দৈন্দিন কাজের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। তবে কর্মচঞ্চলতার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও এখনো জেলার বৃহৎ অংশের জনমনে স্বস্তি ফেরেনি। জেলার প্রায় অর্ধকোটি বাসিন্দারা এখনো এক অদৃশ্য ভয়-আতঙ্কে দিবারাত্রি পারকরছেন।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার মতো শিল্প সমৃদ্ধ জেলা জেলা গাজীপুরেও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন হয়। এ সময়ে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট,স্থান ও স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটার পর থেকেই পুরো জেলা জুড়েই আইনশৃংখলা বাহিনী দুর্বৃত্তদের ধরতে সাড়াশি অভিযান শুরু করে। এর মধ্যেই সরকার দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সারা দেশেই সন্ধ্যা আইন জারি করে। এর পরে জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থতির ধিরে-ধিরে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে।পরে কর্মের অনুকূল পরিবেশ দেখে শিল্প কারখানার মালিকরা কয়েকদিন কারখানা বন্ধ রাখার পর আবারও তাদের কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু করেছেন।
সরেজমিনে, শিল্পাঞ্চলের কোনাবাড়ী, ভোগরা বাইপাস, টঙ্গী ও মাওনা এলাকায় ঘোরে জানা যায়, সম্প্রতি কোটা আনন্দোলনের সময়ে সারা দেশের ন্যায় শিল্প সমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরেও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন হয়। এ সময়ে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, স্থান ও স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
এসব সহিংসতার ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের আট থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে।আর এসব মামলায় নামীয় পাঁচ শতাধিক আসামির পাশাপাশি অজ্ঞাতসহ ১৫ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ খবর লাখ লাখ গাজীপুরের বাসিন্দারা শোনতে পারার পর থেকেই জনমনে এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিক বাসিন্দাদের মনে ব্যাপক ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
কোনাবাড়ী এলাকার পোশাক শ্রমিক সেলিম আহমেদ জানান,কোটা আন্দোলনের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।এতে অর্থনৈতিক দৈন্যতা দেখা দিয়েছে। এ জন্য ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই জরুরি অবস্থান মধ্যেই কারখানায় যাচ্ছেন। তবে সামনে দেশের পরিস্থিতি অন্ধকার ভেবে এক ভয় কুড়ে খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন,সকাল ৮টায় অফিসে যাই। ছুটি হলে অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হয়। দেশে জরুরি অবস্থান চলমান থাকায়। মাঝে মধ্যেই রাতে বাসায় ফেরার পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির শীকার হতে হয়েছে। এরমধ্যেই আবার গাজীপুরের সহিংসতা ঘটনায় থানায় ২৮ টি মামলা হয়েছে।এসব মামলায় ১৫ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে করে শ্রমজীবীরা বাসিন্দারা রাত বিরাতে চলাচলের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হয়রানি আতঙ্কে ভোগছেন।
জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক মুসলিমা আক্তার বলেন, এখন রাস্তায় আন্দোলন, মারামারি না থাকলেও আমরা রাইতে অফিস ছুটির পর রাস্তায় যাইতে ভয় পাই। কারণ বেশি রাইতে রাস্তায় লোকজন দেখলে মিলিটারি পুলিশ মেলা হয়রানি করে। তিনি আরও বলেন, দুই আগে রাইত ১২ টার সময় চৌরাস্তায় আমগো এক স্যারকে মেলা জিজ্ঞেসাবাদ করে মেলিলটারিরা হয়রানি করছেন। কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে কোনদিনও মেলা রাইতে ছুটি দিতেন না।
অপর দিকে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বলেন, দেশের এই কঠিন ক্লান্তিকালে জীবনের মায়াত্যাগ গাজীপুর শিল্পাঞ্চলসহ দেশের সকল পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন। কিন্তু তাদের প্রতি কারখানা মালিকরা মানবিক না হয়ে এক ধরনের জুলুম চাপিয়ে দিয়েছেন। কথা ছিলো জরুরী আইন যতদিন চলবে। তারা অতিরিক্ত রাত্রি কালীন কারখানা খুলা রাখবেন না। কিন্তু তারা মধ্যে রাত পর্যন্ত কারখানায় কাজ করিয়ে নিয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে। এতে করে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ আতঙ্কে শ্রমিকরা চমকে উঠছে। তিনি আরও বলেন,শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি অনেক রাতে অফিস ছুটি হওয়ায়। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদ্বারা অনেক যায়গায় হয়রানির শীকারও হচ্ছেন বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সব পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশের অতন্ত্য ৪২০ জন সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন যদি কোন কারখানা অনেক রাতে ছুটি হয়। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের আতঙ্ক বা ভয়ের কিছু নেই। তারা তাদের অফিসের পরিচয় পত্র দেখালেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ধরণের ঝামেলায় পড়তে হবে না। তিনি আরও বলেন,তবে আমরা কারখানা মালিকদের উদ্দেশ্য বলবো গভীর রাতে শ্রমিকদেরকে রাস্তায় না ছেড়ে দিতে। তাহলে তাদের মধ্যে কোন আতঙ্ক সৃষ্টি হবেনা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন