ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সফল ফ্রিল্যান্সার সজিব

বরিশাল থেকে উঠে আসা তরুণ উদ্যোক্তা সজিবুল ইসলাম ডিজিটাল মার্কেটিং ও ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শুধু একজন সফল ফ্রিল্যান্সার নন, বরং একজন উদ্যমী আইটি উদ্যোক্তা হিসেবেও প্রশংসিত। তার অধ্যবসায়, সংকল্প এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তিনি একটি সফল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তবে ২০২৪ সালের ৬ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট তার জন্য এবং পুরো বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

সজিবুলের ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। যখন তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। তিনি তার বড় ভাই সাব্বির আহমেদ অন্তরের অনুপ্রেরণায় ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করেন। প্রথমে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে তিনি বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পান। তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ফাইবারে ২৫ ডলারের একটি ডাটা এন্ট্রি কাজ দিয়ে। এরপর থেকে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে একজন শীর্ষস্থানীয় ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

২০২৪ সালের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় সজিবুল এবং তার টিমকে বড় ধাক্কা খেতে হয়। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বিদেশি ক্লায়েন্টদের আস্থা কমে যায়। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সজিবুল পিছিয়ে যাননি।

তিনি বলেন, “ব্ল্যাকআউটের ফলে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়েছিল, তবে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আবারও আমাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছি।”

ফ্রিল্যান্সিং খাতে বড় আয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, সজিবুল বিশ্বাস করেন যে এটি শুধুমাত্র সফল হতে পারে যদি এটি একটি সংগঠিত কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয়। তিনি তার নিজস্ব টিম তৈরি করেছেন, যাদের দক্ষতা উন্নত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন। তার এজেন্সি “VA’s Troop” বর্তমানে ১২ জনের একটি টিম নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে ৬ জন অফিসে এবং বাকি ৬ জন রিমোটভাবে কাজ করছে।

ব্ল্যাকআউটের পরবর্তী সময়ে সজিবুল এবং তার টিম আবারও বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, “দেশকে পরিবর্তন করতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা অপরিহার্য। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিশ্বে আমাদের অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে।”

সজিবুল ইসলাম এখন তার এজেন্সিকে বিশ্বমানের করে তোলার স্বপ্ন দেখছেন এবং বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতকে শীর্ষ স্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে এবং টেকসই ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সিং গন্তব্যে পরিণত হতে পারবে।

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মতো বিপর্যয় সত্ত্বেও, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতের সম্ভাবনা অপরিসীম। সজিবুলের মতো উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং দেশের প্রযুক্তিখাতে একটি স্থায়ী পরিবর্তন আনতে কাজ করছেন।

ফ্রিল্যান্সারদের অবদানের পাশাপাশি, দেশের সিস্টেম উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। টেকসই ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে এই সেক্টরে সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাবে। ফ্রিল্যান্সিং খাতে বিনিয়োগ ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে, বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্রিল্যান্সিং গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।