পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চেয়ারম্যানের অফিসে তালা, পরিষদ আসেন না চেয়ারম্যান
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক টাকা বিভিন্নভাবে লোকজনের কাছ থেকে নেওয়ার অভিযোগে উঠেছে। প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টাকা নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। এদিকে পরিষদে আসেন না চেয়ারম্যান।
সরকার পতনের পর থেকে চেয়ারম্যানকে ইউনিয়ন পরিষদে দু’একবার দেখা গেলেও আর দেখা যায়নি, জানান স্থানীয়রা।
টাকা না দেওয়া, জমি দখলসহ নানান অপকর্মের কারণে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অসংখ্য জনগণ
চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার সময়ে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্ধারিত অফিস রুমে তালাবদ্ধ করে দেন। পরের দিন সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তার অফিস কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিলেন সরেজমিনে দেখা যায়।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঠিক ভাবে অফিসে আসেননি।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কুদরত- ই- খুদা মিলন বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার দেখিয়ে বিভিন্নভাবে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের কে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো, নিজের ক্যাডার বাহিনী দ্বারা জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তার নামে রয়েছে। তার নামে অসংখ্য মামলাও চলমান রয়েছে।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দিঘলগাঁও গ্রামের এক অসহায় বৃদ্ধ মহিলা আনোয়ারা বেগম (৭০) সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর সিপাইপাড়া বাজারে থাকা খাসজমিতে এক মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছিলেন। মিলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দ্বারা ওই বৃদ্ধার বসত ভিটা ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করেন।
এমন অভিযোগ তুলেন ওই বৃদ্ধা। এখন ওই বৃদ্ধা বিচারের দাবীতে মানুষের দ্বারে দ্বারে আশ্রয়ের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে তিনি তার বসত ভিটা ফেরতের দাবি জানান। ওই খাস জমিতে চেয়ারম্যানের মার্কেট হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মুল্য কয়েক কোটি টাকা।
ওই ইউনিয়নের দীঘলগাঁও গ্রামের আকিম উদ্দীন (দলু) জানান, অর্পিত সম্পত্তিতে দোকান নির্মাণের অনুমতির জন্য ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকাও দেননি, মার্কেটও নির্মাণ করতে দেয়নি। এখন আমি টাকা ফেরত চাই।
ওই ইউনিয়নের দিঘলগাঁও গ্রামের জফির উদ্দিন জানান, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ১৪ একর ৬৪ শতাংশ জমি ওই চেয়ারম্যান জবরদখল করে রাখেন। কোর্টের মাধ্যমে রায় পেলেও জমি ফেরত দিচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ঘর ভাঙার দায়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার ও মাথাফাটাফার দায়ে ৩০ হাজার সবমিলিয়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা তার কাছে পাবেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এসব টাকা না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
ওই ইউনিয়নের বাইমগছ গ্রামের ফারুক জানান, আমার কাছে ৪লাখ টাকা চাইছে। আমি না দেওয়ায় আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। থানার অজ্ঞাত নামা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। আমি তার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
ওই ইউনিয়নের ফুটকিবাড়ি গ্রামের নকিবুল জানান, কুলি শ্রমিকের কাজ দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকাও দেননি এবং কাজেও দেননি।
ওই ইউনিয়নের হাওয়াজোত গ্রামের ওবায়দুল জানান, সিপাইপাড়া বাজারে আমার বড় হোটেল ছিলো। আমি বিএনপি করি এবং তার নির্বাচন না করায় সে চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার দোকান ভাঙচুর করে। দোকানে থাকা ২ লাখ টাকা মালামাল সহ প্রায় ৮ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি করেন তার ক্যাডার বাহিনী দ্বারা।
পাথর-বালু বব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জানান, ২০১৭/২০১৮ সালের দিকে তিনি ১ একর জমি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ক্রয় করেন। জমি ক্রয়ের পর সমস্ত জমি জবরদখল করে নেয় মিলনের লোকজন। এরপর বিভিন্ন ভাবে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে। একাধিক বার জেলও খেটেছি। কাগজপত্র স্বচ্ছ থাকা সত্বেও তার কাছ থেকে জমিটি দখলে নিতে পারছি না।
এই রকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার নামে। মানুষ ভয়ে এতোদিন মুখ খুলেননি। তার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনি ওই ইউনিয়নে। থানাকে কন্ট্রাক্ট করে গরিব অসহায় ব্যক্তিদের অজ্ঞাত নামা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া তার এক রকম নেশা ছিল।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিলনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, তিনি বিষযটি অবগত নন। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন