পীরগঞ্জের ছাতুয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা ভাড়াটে শিক্ষার্থী দিয়ে সমাপনী ও দাখিল পরীক্ষা
সকাল ১১টা ১৩ মিনিট। তখনও দু’জন কালো বোরকা পরিহত ছাত্রী মাদ্রাসার বাহিরে আড্ডা দিচ্ছিলো। তারা উভয়েই ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তোমরা বাহিরে কেন? ক্লাশ হচ্ছে না! এমন প্রশ্নের জবাবে সমস্বরে জানালো- এখনো স্যার ক্লাশে আসেননি। গুটি গুটি পায়ে সুপারের কক্ষে ঢুকতেই দেখা মেলে ক’জন শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে নিয়ে সুপার খোশগল্পে মত্ত।
গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির কারণে সুপারের কপালে অনেকটাই বিরক্তির ভাঁজ। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর নিকট জানতে চাইলে প্রথমতঃ তিনি তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। বেলা পৌঁনে ১২টায় কোন কোন শিক্ষককে শ্রেণি কক্ষে যেতে দেখা গেছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নস্থ ছাতুয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় সরেজমিনে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মাদ্রাসা সুপার একেএম শহিদুল ইসলামের অনুমতিক্রমে সহকারী শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস মৌলভীর সহায়তায় শ্রেণি কক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, এবতেদেয়ী শাখায় কাগজ কলমে ৫০জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ণরত দাবি করা হলেও ভাঙ্গা একটি টিনের ঘরে দেখা মেলে ৪ জন ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এবতেদেয়ী শাখার অন্যান্য শ্রেণি কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের দেখা মেলেনি।
৬ষ্ঠ হতে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২শত ২০ জন দাবি করা হলেও শ্রেণি কক্ষগুলো ঘুরে দেখা গেছে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উপস্থিত ৫ জন, ৭ম শ্রেণিতে ৭জন, ৮ম শ্রেণিতে ৬জন, ৯ম শ্রেণিতে ৭জন ও ১০ম শ্রেণিতে ৪জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। উক্ত মাদ্রাসায় মোট শিক্ষক সংখ্যা- ১৬জন, কর্মচারি সংখ্যা- ৫জন।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার ও জুঁইমনি জানায়, আমাদের ক্লাশে আমরাই নিয়মিত শিক্ষার্থী। ১০ম শ্রেণিতে উপস্থিত ৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে লতা খাতুন ও রোকন মিয়াকে ক্লাশে উপস্থিতির সংখ্যা কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ক্লাশের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে তাই উপস্থিতির সংখ্যা কম। তাছাড়া আমাদের এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম।
ছাতুয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় জমি দাতা ছহির উদ্দিন প্রধান আক্ষেপ করে বলেন, সুপার শহিদুল ইসলাম মাদ্রাসাটাকে শেষ করে দিয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া মাদ্রাসার জমিতে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট স্বার্থ ছাড়াই তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট লোকদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া ও মাদ্রাসার পুরাতন ভবন কোন টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ করেন তিনি।
অভিভাবক আশরাফুল ইসলাম জানান, ছাতুয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম একেবারই নাজুক হওয়ায় ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে। বিশেষ করে এবতেদায়ী শাখা প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য। ফলে মাদ্রাসার মান বাঁচাতে আশপাশের স্কুল, মাদ্রাসা থেকে ভাড়াটিয়া ছাত্রছাত্রী দিয়ে ৫ম শ্রেণির সমাপনি ও দাখিল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। শুধু তাই নয়, এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী দিয়ে ৫ম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষা এবং এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী দিয়ে দাখিল পরীক্ষা সম্পন্ন করার তথ্য (প্রমাণ সংরক্ষিত) অহরহ। এসব ডামি পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারীর ছেলে-মেয়ে ও আত্নীয় স্বজন রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ মন্ডল বলেন, শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীই প্রাণ। এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ছাতুয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা ‘র সুপারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন