হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম। ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হাকিমে হাদীছ ছিলেন, অর্থাৎ সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম্ রাখতেন, যার কারণে তিনি বলেন, হাদীছ শরীফের খিলাফ আমার কোন বিষয় কারো দৃষ্টিগোচর হলে সে যেন হাদীছ শরীফ অনুযায়ী আমল করে।

অর্থাৎ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে ছিল, যার কারণে তাঁর কোন বিষয় হাদীছ শরীফের খিলাফ প্রমাণ করা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং কিয়ামত অবধি সম্ভব হবেনা।
এ প্রসঙ্গে ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবদ্দশায় ঘটিত একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার একই বছর হজ্বে যান। হজ্ব উপলক্ষে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাওয়াফ করছিলেন, তখন কোন এক ব্যক্তি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দূর থেকে লক্ষ্য করে বা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো যে, “হে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি!

এই সেই ইমাম আ’যম কুফী যিনি আপনার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) বিরুদ্ধে ফতওয়া দেন।” আল্লাহ পাক প্রদত্ত খোদায়ী ইল্ম ও সূক্ষ্ম সমঝের কারণে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিষয়টি বুঝতে বাকী রইল না। তাই হজ্বের কাজ সমাধা করে হযরত ইমাম আয’ম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি আওলাদে রাসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন।

কিন্তু আওলাদে রাসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি সালামের জবাব দিলেন না বরং চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি সবিনয়ে এর কারণ জানতে চাইলেন।জবাবে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আপনিই কি সেই ইমাম আবু হানীফা কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি আমার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে থাকেন।

জবাবে ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি যদি সত্যিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিতাম, তবে হাদীছ শরীফে রয়েছে, মেয়েদের অসুস্থতার সময় নামায ক্বাযা করতে হয়না। কিন্তু রোযার ক্বাযা করতে হয়। অথচ নামাযের গুরুত্ব রোযা থেকে অনেক বেশী।

যদি আমি হাদীছ শরীফ-এর বিরোধিতা করতাম, তবে ফতওয়া দিতাম যে, নামায ক্বাযা করতে হবে, রোযা ক্বাযা করতে হবেনা কিন্তু আমি তা বলিনা। আবার সম্পত্তি বা ওয়ারিছসত্ত্ব বন্টনের ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ফতওয়া হলো- মেয়েরা সম্পত্তির একভাগ পাবে। আর ছেলেরা দু’ভাগ পাবে। যদি আমি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধেই ফতওয়া দিতাম, তবে ফতওয়া দিতাম, মেয়েরা সম্পত্তির দু’ভাগ পাবে, আর ছেলেরা পাবে একভাগ।

কারণ মেয়েরা দুর্বলা ও অবলা। কিন্তু আমি তা বলি না। আর লটারীকে আমি নাজায়িয ফতওয়া দেই, যা শরীয়তেরই ফতওয়া। অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে যাওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ থেকে একজনকে নিয়ে যেতেন, তা ফয়সালা করতেন লটারীর মাধ্যমে। আমি সে লটারীকে জায়িয ফতওয়া দেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আমি হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলাম কোথায়?”

একথা শুনে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিকে দৃষ্টি করলেন ও তাঁর কপাল মুবারকে চুমু খেলেন এবং বললেন, “হে ইমাম আ’যম! আপনার গভীর ইলম ও সুক্ষ্ম সমঝ আপনাকে সকলের নিকট শত্রু বানিয়েছে।

“প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বুঝতে হলে তার বাস্তব দৃষ্টিান্ত হচ্ছেন বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদের রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুজাদ্দিদে আযম সুলতানুন নাছীর মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।

তিনি প্রায়ই বলেন, “আমার কোন বিষয়- আক্বীদা হোক, আমল হোক, বক্তব্য হোক, লিখনী হোক প্রভৃতি শরীয়তের উছুল বা দলীল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের খিলাফ যে কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি তৎক্ষনাত তা ছেড়ে দিব এবং যা শরীয়ত সম্মত বলে প্রমাণিত হবে তাই গ্রহণ করবো।”কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয়নি যে, হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম -এর প্রদত্ব চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করা। মূলতঃ তাঁর যাবতীয় বিষয়ই কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা পরিচালিত।