সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-অন্য দলের যত হিসাব
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা স্পষ্ট নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে সে বিষয়ে কোনো দিনক্ষণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। এর মধ্যেই রাজনীতিতে একটা আলোচনা উঠেছে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো বিভিন্ন দল একে সমর্থন করছে। অন্যদিকে শুরু থেকেই এর বিরোধিতায় আছে বিএনপি।
আনুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে দলগুলোর যে অবস্থান সেখানে রাজনীতি তো বটেই, ভোটের নানা সমীকরণও মেলাচ্ছেন অনেকে। আলোচনা আছে- নতুন পদ্ধতিতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সেটা কোনো দলকে লাভবান করবে, আর কোনো দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশে এখন যে প্রচলিত নির্বাচন সেখানে ৩০০ আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী থাকে। ভোটারদের ভোটে তারা সরাসরি নির্বাচিত হন।
কিন্তু এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে এখন মতামত দেয়া হচ্ছে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করার। যেখানে সারাদেশে একটা দল যতো ভোট পাবে, তার আনুপাতিক হারেই নির্ধারিত হবে সংসদে ঐ দলটি কত আসন পাবে।
অর্থাৎ, এখানে সরাসরি জনগণের ভোটে কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হবেন না। কোনো একটি দল যদি শতকরা ৪০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে সংসদে তার আসন হবে ১০০ আসনের মধ্যে ৪০টি।
কিন্তু আনুপাতিক এই নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কী আলোচনা হচ্ছে দলগুলোর মধ্যে?
আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র আসন কমবে?
বাংলাদেশে অতীতে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচনে এর সুফল পেয়েছে প্রধানত বড় দুটি দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনগুলোতে জয়-পরাজয়ের ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি হওয়ায় যে দল বিজয়ী হয়েছে, তারাই সংসদের বেশিরভাগ আসন পেয়েছে। কিন্তু অনেক আসনেই দেখা যায় জয়ী আর পরাজিত প্রার্থীর ব্যবধান খুবই কম।
বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশক থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর পর ২০০৮ পর্যন্ত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রধান দুটি বড় দল তাদের ভোটের হারের তুলনায় আসন বেশি পেয়েছে। এটা বেশি ঘটেছে বিজয়ী দলের ঘটে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি যে ভোট পেয়েছিলো তার শতকরা হার হচ্ছে ৩০.৮১ শতাংশ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোটের হারও প্রায় একইরকম ৩০.০৮ শতাংশ।
অথচ বিএনপি জয়ী হয় ১৪০ আসনে, আর আওয়ামী লীগ পায় ৯৩ আসন।
অর্থাৎ দুই দলের ভোটের হার অনেকটা একইরকম থাকলেও জয়ী দল বিএনপি সংসদে অনেক বেশি আসন পেয়ে যায়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবার এর সুফল পায় আওয়ামী লীগ। দলটি ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৪৬ আসন । অন্যদিকে বিএনপি ৩৩.৬১ শতাংশ ভোট পেলেও আসন পায় ১১৬টি।
২০০১ সালের নির্বাচনেও দুই দলের ভোটের হার ছিলো অনেকটা একই রকম। বিএনপি ৪০.৮৬ শতাংশ ভোট, আওয়ামী লীগ ৪০.২১ শতাংশ ভোট। কিন্তু জয়ী দল বিএনপি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন অর্থাৎ ১৯৩ আসন পেয়ে যায়। আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি।
কিন্তু আনুপাতিক নির্বাচন হলে কি দল দুটো এতো আসন পেতো? এর উত্তর হচ্ছে নেতিবাচক।
উদাহারণ হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনকে রাখলে দেখা যাবে, সেখানে ৪০.৮৬ শতাংশ ভোট পাওয়ায় জয়ী দল বিএনপির আসন হতো ১৯৩টির বদলে সর্বোচ্চ ১২৩টি। এবং আসন বাড়তো আওয়ামী লীগের। তারা ৪০.২১ শতাংশ ভোট পাওয়ায় তিনশত আসনের মধ্যে তাদের ভাগে আসতো ১২০টি আসন। সেক্ষেত্রে সংসদে দুই দলই থাকতো প্রায় সমান সমান অবস্থায়।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের হারে ব্যবধান ছিল খুবই কম। কিন্তু আসন সংখ্যায় সেটা প্রতিফলিত হয়নি
ফলে বিশ্বব্যাপী এটা বলা হয় যে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে জয়ী দলের আসন কমবে অন্যদিকে ছোট দলগুলো তুলনামূলক বেশি আসন পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলছিলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন বাদ দিয়ে এর আগের নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখায় জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে লাভবান হবে।
“ছাত্ররা যদি এখন নতুন কোনও দল তৈরি করে, তারা যদি ভোট পায়, তাহলে আনুপাতিক নির্বাচনে এই দলগুলো ভালো করবে। কারণ এখানে হবে আনুপাতিক নির্বাচন। এক ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হলেই ঐ আসনটি আপনার সেটা আর থাকছে না।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি
“ফলে আগের হিসাবে যে দল জয়ী হতো তার আসন কমে যাবে, সেগুলো পাবে অন্য দলগুলো তাদের ভোটের হার অনুযায়ী,” বলছেন জোবাইদা নাসরীন।
জামায়াতের লাভের অঙ্ক কী?
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আনুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রসংস্কারের নানা রূপরেখা তুলে ধরার সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে যে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে জামায়াতের জোট বাস্তবে রূপ নিলে সেটা নতুন এই জোটকে রাজনীতি তো বটেই ভোটের মাঠেও সুবিধা দেবে। আনুপাতিক নির্বাচন হলে সেটা জামায়াতকেও বাড়তি আসন পাবার সুযোগ করে দেবে। যদিও জামায়াত সেটা বরাবরই নাকচ করে আসছে।
কিন্তু এতোদিন প্রচলিত নির্বাচনে অংশ নিলেও এখন এই পদ্ধতি পরিবর্তনের কথা তাহলে কেন তুলছে জামায়াত?
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এখানে তাদের দলের লাভের কোনও বিষয় নয়, তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ‘দেশ-জাতির উপকারের’ দিকে।
“আমাদের প্রস্তাবের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কোনও দলের আলাদা কোনও বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ নেই। বরং কোনও একটি দল তাদের সাপোর্ট যতটুকুই থাকুক, তারা যদি আধা পার্সেন্ট ভোটও পেয়ে যায়, তাহলে সংসদে কমপক্ষে একটি আসন হলেও সে পাবে। তখন সংসদ হবে একটা কোয়ালিটি পার্লামেন্ট। এটা জনগণের চাহিদা পূরণের উপযুক্ত হবে বলে আমরা মনে করি। কারণ এখানে সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটের রিফ্লেকশন হবে বলে মনে করি,” বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর।
শফিকুর রহমান বলছেন, এখন যেভাবে নির্বাচন হয়, সংসদ গঠিত হয়, সেটা নাগরিকদের ‘খুব একটা উপকারে’ আসছে না।
“যেমন সংসদে এমন কিছু লোক নির্বাচিত হয়ে আসছেন, যারা নিজেরা কথা বলতে পারেন না, যে লিখিত স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসনে সেটাও ঠিকমতো পড়তে পারেন না। অথচ তারা এসেছেন রাষ্ট্রের আইন তৈরি করতে। স্থানীয় সরকারে যারা নির্বাচিত হবেন, উন্নয়ন হবে তাদের হাত ধরে। কিন্তু কার্যত এটা এখন এমপিদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এমপিদের কিন্তু এটা কাজ না।”
“এমপিদের মূল কাজের জায়গা হচ্ছে তারা দেশের আইন রচয়িতা হিসেবে ভালো আইন সংযোজন করবেন, মন্দ আইন থাকলে তা সংশোধনে বিল আনবেন। সেদিকে তাদের কোনও অ্যাটেনশন নাই। আমরা এখানে পরিবর্তন চাই,” বলেন শফিকুর রহমান।
ছোট দলগুলোর কী হবে?
বাংলাদেশে অতীতে বিভিন্ন সময় কয়েকটি বামপন্থী দল আনুপাতিক নির্বাচনের কথা বলে এসেছে। সম্প্রতি সিপিবি এর জোরালো দাবি তুলে ধরে বক্তব্য জানিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন দলগুলোও একই দাবি জানিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশে এমন কিছু রাজনৈতিক দল আছে যাদের ভোট সারাদেশে খুব একটা নেই। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও আসনে জনপ্রিয়তা থাকায় অতীতে তাদের অনেকেই এক বা একাধিক আসনে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আনুপাতিক ভোটে আবার এসব দল শতাংশের হিসাবে ন্যূনতম ভোট না পেলে হারিয়ে যাবার শঙ্কাও রয়েছে।
জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক অবশ্য বলেন, ভোটের মাঠে জনমত যাচাই করেই টিকে থাকতে হবে ছোটবড় সব দলকে।
“দেখুন কার কী লাভ হবে, সেটা পরে। আমাদের দল কী পেলো বা দলের ভবিষ্যৎ কী সেটার চেয়ে আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত রাষ্ট্র সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। আমরা চাই এখানে গণ-অভ্যুত্থানের পর আর কোনও সরকার যেন ভোটে বিজয়ী হওয়ার কারণে স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠতে না পারে। এর জন্য আনুপাতিক নির্বাচন এখানে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোও বাংলাদেশে খুব একটা মূল্যায়ন পায় না।
“দেখুন, গত পঞ্চাশ বছরে নির্বাচনে যে অভিজ্ঞতা সেখানে আমরা দেখেছি যে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনও একটা দল সরকার গঠন করছে। কিন্তু ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হচ্ছে যে দল, তাদের কিন্তু সরকারে কোনও ভূমিকা থাকে না। কার্যত পাঁচ বছরে যে সরকার শাসন করে, সেখানে বিরোধীদের মতামতের অর্থাৎ ৩২ শতাংশ সমর্থন যাদের তাদের কোনও মূল্যায়ন নেই। আমরা এটার পরিবর্তন চাই। কেউ যেন এককভাবে কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে না ওঠে।”
বিএনপির বিরোধিতার কারণ কী?
তবে ছোট দলগুলো চাইলেও প্রধান একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি আবার আনুপাতিক নির্বাচনের বিরোধী। বাংলাদেশে এর আগে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ চালিয়েছে বিএনপি, দলটির ভেতরে মূল্যায়ন হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবারও তারা জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় সারাদেশেই বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো আছে, সমর্থন আছে, ভোটও আছে।
বিএনপি ১৯৯১ সালে ৩০.৮১ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ৩৩.৬১ শতাংশ, ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪০.৮৬ শতাংশ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পায়।
এমন অবস্থায় দলের ভেতরে বিভিন্ন পর্যায়ে আনুপাতিক নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব আছে। যার একটি বড় কারণ, আনুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপির জন্য এককভাবে জয়ী হওয়ার পথ কঠিন হয়ে যাবে বলেই আলোচনা আছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে। যদিও প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য সামনে আনছেন না বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর মতো পরিস্থিতি নেই।
“আপানি তো এখানে একটা হাইব্রিড সিস্টেমে চলতে পারবেন না। আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সিস্টেম ফলো করতে হবে। আপনি প্রেসিডেনশিয়াল মডেলে গেলে সেটা একটা চিন্তা, আনুপাতিক ভোটের মডেলে গেলে সেখানে আরেকটা চিন্তা। এসবের বিশালতা অনেক বেশি। আমি বললাম, আর আনুপাতিক হয়ে গেলো ব্যাপারটা এমন না।”
আমীর খসরু মাহমুদ বলছেন, নতুন পদ্ধতি চাল করতে হলে পুরো রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সবখানেই পরিবর্তন আনতে হবে।
“এখানে তো তখন বিশাল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন, স্থানীয় সরকারের পুরো কাঠামো বদলে ফেলতে হবে। তাছাড়া মাথায় রাখতে হবে যে, আনুপাতিক নির্বাচনে ঝুলন্ত সংসদ হয়ে যেতে পারে। তখন আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আপনি কি ঠিকমতো সরকার চালাতে পারবেন? এটাও কিন্তু একটা প্রশ্ন।”
“দেখেন অনেকেই তো মনে করছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য এটা করা হচ্ছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না, কিন্তু এরকম কথাও তো এখন উঠছে।”
আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে?
বাংলাদেশে এটা ঠিক যে, সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবসময়ই তিরিশ শতাংশের উপরে ভোট পেয়ে আসছে।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট ছিল ৭৩.২০ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে দলটির ভোট কমে যায়। তখন আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের মাত্র ২৭.৩৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ১৯৯১ সালের ভোটে আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ৩০.০৮ শতাংশ ভোট। ১৯৯৬ সালে ৩৭.৪৪ শতাংশ, ২০০১ সালে ৪০.২১ শতাংশ। আর ২০০৮ সালে ৪৮.০৪ শতাংশ।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের একটা বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে আওয়ামী লীগের। এই ভোট ব্যাংক আনুপাতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে লাভবান করবে- অনেকেই এমনটা মনে করলেও দলটি আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান মনে করেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে পারে এই ‘ভয় দেখিয়ে’ আনুপাতিক নির্বাচনের বিরোধিতার কোনও যুক্তি নেই।
“আওয়ামী লীগকে তো সবাই এখন গণহত্যাকারী দল হিসেবে অভিযুক্ত করছে। এটা শুধু অভিযোগ, বিচার তো হয়নি। তাদের বিচার হবে। সেই বিচারে তাদের দলের কী পরিণতি হবে সেটাও তো দেখার বিষয়। সুতরাং আওয়ামী লীগের জুজুর ভয় দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।”
অন্যদিকে, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকও বলছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দিয়ে আনুপাতিক নির্বাচনে গেলে সেটা হবে আত্মঘাতী।
“আওয়ামী লীগের মতো গণহত্যাকারী দলকে বিচারের মুখোমুখি করে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারপর সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে যেতে হবে। আওয়ামী লীগকে রেখে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হলে সেটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে,” বলেন নুরুল হক।
তবে আওয়ামী লীগ বা অন্যদলগুলোর লাভ-ক্ষতির হিসাবের বাইরেও আনুপাতিক নির্বাচনের সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে এর খরচের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি আছে তিনশত সংসদীয় এলাকার উন্নয়ন কারা করবে সেই প্রশ্ন। কারণ স্থানীয় সরকার এখনও শক্তিশালী নয়।
রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, আনুপাতিক পদ্ধতিতে সরাসরি ভোটে এমপি নির্বাচনের ব্যবস্থা না থাকায় সংসদে কারা যাবেন, সেটা পুরোপুরি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে তো রাজনৈতিক দলের ভেতরেও গণতন্ত্র নেই। সেখানে জয়ী দলগুলোই নির্ধারণ করবে তারা যে আসন পেয়েছে, সেগুলো কাদেরকে দেবে। তখন সরাসরি জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হচ্ছে না। বরং দল যে কয়টি আসন পাচ্ছে, দলের নেতা সে কয়টি আসনের এমপি নির্ধারণ করবেন। আমরা আগেও দেখেছি যে, দুর্নীতির মাধ্যমে মনোনয়ন কেনা-বেচা হয়, এখানেও প্রতিনিধি কেনা-বেচার সুযোগ থাকবে।”
“যেসব দেশে প্রাদেশিক সরকার থাকে সেখানে কোনও একটা প্রদেশে পরীক্ষামূলকভাবে আনুপাতিক ভোট দিয়ে দেখতে পারেন যে এটা কতটা কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রাদেশিক সরকার নেই বরং একক সরকার, সেখানে পরীক্ষামূলকভাবেও এটা করার সুযোগ কম। এটার জন্য দেশের পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আগে সেরকম অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে।”
সবমিলিয়ে বলা যায়, আনুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতই পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে যেমন ব্যাপক ঐকমত্য তৈরি হয়নি, তেমনি যাচাই হয়নি ভোটারদের মনোভাব। আবার অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার নতুন একটি নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে আদৌ আগ্রহী হবে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়। -বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন