হযরত হাবিব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র জীবন পরিবর্তনের সুন্দর ঘটনা
সকল প্রশংসা যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুূ শরীফ সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে একজন সুদখোর ছিলেন। উনার অনেক টাকা-পয়সা ছিল। তিনি সমস্ত টাকা পয়সা সুদে খাটাতেন।
প্রতিদিন দেনাদারদের থেকে তিনি কিছু না কিছু সুদ আদায় করতেন, যা দ্বারা উনার প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হতো। অর্থাৎ উনার শরীরের রক্ত-গোশত সুদের হারাম পয়সা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।একদিন হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাড়িতে এসে দেখলেন ঘরে কোনো খাবার নেই। তখন তিনি দেনাদারদের বাড়িতে গেলেন সুদ আদায় করতে। এক বাড়ি থেকে একটি খাসির মাথা ও অন্য বাড়ি থেকে আটা, লাকড়ি ইত্যাদি নিয়ে আসলেন।
উনার আহলিয়াকে রান্না করতে বলে তিনি বাইরে চলে গেলেন। রান্না-বান্না শেষ হওয়ার পর যখন উনারা খেতে বসলেন, তখন এক ভিক্ষুক এসে খাবার চাইলো। হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘আমার বাড়িতে যা খাবার আছে তা তোমাকে দিয়ে দিলে, আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। তুমি অন্য বাড়িতে গিয়ে খাবার চাও।’
ভিক্ষুক চলে গেলো। এদিকে হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আহলিয়া বাটিতে তরকারী ঢালতে গিয়ে দেখলেন যে, সব গোশত ও সুরা রক্তে পরিণত হয়েছে। এটা দেখে তিনি খুব ভয় পেয়ে গেলেন এবং হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে দেখালেন। হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফিকির করলেন, ‘অনেক হারাম খাওয়া হয়েছে, এবার তওবা করার সময় হয়ে গিয়েছে।’
তিনি নিয়ত করলেন আজ থেকে তিনি আর সুদের পয়সা খাবেন না, শুধু মূল টাকা ফেরত নিবেন। তারপরে তিনি মূল টাকা আদায় করার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন। পথিমধ্যে কিছু বাচ্চা ছেলেরা ছুটাছুটি করছিল। হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন তাদের অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বাচ্চা ছেলেরা বললো, ‘তোমরা সরে যাওা সুদখোর হাবিব আযমী আসছে।
যদি তার পায়ের ধূলা তোমাদের গায়ে লাগে তবে তোমাদের শরীর নাপাক হয়ে যাবে।’ একথা শুনে হযরত হাবীব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি চিন্তা করলেন, ‘আমি এত নিকৃষ্ট হয়ে গেছি যে, আমার পায়ের ধূলা লাগলেও মানুষ নাপাক হয়ে যাবে!’ তিনি ঐ মুহূর্তে নিয়ত করলেন, এখন থেকে তিনি সুদের টাকা তো খাবেনই না বরং মূল টাকাও আর ফেরত নিবেন না।
তিনি উনার রাস্তা পরিবর্তন করে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকৃত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফের দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানে গিয়ে খালিছ তওবা করে হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হলেন। তারপরে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে আবার সেই বাচ্চা ছেলেগুলোর সাথে দেখা হলো। তিনি যখন তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বাচ্চা ছেলেগুলো বললো, ‘সবাই সরে যাও!
তওবাকারী হাবিব আযমী আসছেন। যদি তোমাদের পায়ের ধূলা উনার শরীরে লাগে, তবে তোমাদের গুনাহ হবে।’ সুবহানাল্লাহ! এটা শুনে হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি চিন্তা করলেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! আপনি কত মহান! সারাজীবন হারাম খেলাম, শরীরের রক্ত গোশত সব হারাম দ্বারা তৈরি হলো। তারপরও মাত্র একবার তওবা করার পর সমস্ত কিছু মাফ হয়ে গেলো, সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ আগেও ছেলেগুলো বলছিল, আমার পায়ের ধূলা তাদের শরীরে লাগলে তাদের শরীর নাপাক হয়ে যাবে। আর এখন তারা বলছে যদি তাদের পায়ের ধূলা আমার শরীরে লাগে তবে তাদেরই গুনাহ হবে।’ সুবহানাল্লাহ!হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিকির-ফিকির করার উদ্দেশ্যে নদীর পাড়ে একটি কুটির তৈরি করলেন।
সেখানে তিনি নিয়মিত ছবক্ক আদায় করতেন এবং সাথে সাথে উনার শায়েখ হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতেন, উনার থেকে তা’লীম-তালক্বীন মুবারক নিতেন।একদিন উনার আহলিয়া বললেন, ‘অনেকদিন হলো কোনো উপার্জন নেই, ধার-দেনা করে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।’
হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘তুমি চিন্তা করো না। আমি একজন খুব বড় মালিকের অধীনে চাকরি নিয়েছি। কিন্তু অন্তত দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগে উনার কাছে পারিশ্রমিক চাইতে লজ্জা করছে।’ উনার আহলিয়া বললেন, ঠিক আছে। আমি এই দশ দিন কোনমতে চালিয়ে নিব।’ এদিকে হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিন্তু দুনিয়াবী কোন চাকরি নেননি।
তিনি ইবাদত-বন্দেগীতেই মশগুল ছিলেন।যখন দশ দিন অতিবাহিত হলো, উনার আহলিয়া একটা বাজারের ব্যাগ দিয়ে বললেন, ‘আজকে তো আপনার পারিশ্রমিক দেয়া হবে। আপনি বাজার-সদাই করে নিয়ে আসবেন।’ হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যাগটি নিয়ে নদীর তীরে কুটিরে ফিরে গেলেন এবং সারাদিন যিকির ফিকিরে কাটালেন। বাসায় ফেরার সময় উনার আহলিয়াকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়লো।
আর কোনো উপায় না দেখে তিনি বাজারের ব্যাগটা বালু দিয়ে ভর্তি করলেন। ভাবলেন, ভরা ব্যাগ দেখে উনার আহলিয়া প্রাথমিকভাবে কিছুটা সান্তনা পাবেন। তিনি যখন বাড়ির কাছাকাছি আসলেন তখন উনার বাড়ি থেকে পোলাও কোরমার ঘ্রাণ পেলেন। দেখলেন উনার আহলিয়া অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় রয়েছেন। হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার?
বাড়িতে কি হয়েছে?’ উনার আহলিয়া বললেন, ‘আপনার মালিক আপনার পারিশ্রমিক পাঠিয়েছেন। আপনার মালিক উনার পক্ষ থেকে লোক এসে যবেহ করা একটা পুরো খাসি, একবস্তা আটা, বড় পাত্রভর্তি উৎকৃষ্ট ঘি ও মধু, রান্না করার জন্য লাকড়ি এবং চারশত দিরহাম দিয়ে গিয়েছেন। উনারা বলে গিয়েছেন, আপনি যদি আরো ভালো করে কাজ করেন, তবে আপনার পারিশ্রমিক আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে।’
সুবহানাল্লাহ! হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুঝতে পারলেন মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতী রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন। এদিকে উনার হাতে সেই বালু ভর্তি বাজারের ব্যাগ দেখে উনার আহলিয়া বললেন, ‘ব্যাগে কি রয়েছে?’ আপসেআপই হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো, ‘ময়দা রয়েছে।’
তখন উনার আহলিয়া ব্যাগটা নিয়ে খুলে দেখলেন, সেখানে সত্যি ময়দাই রয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত বালুগুলো কুদরতীভাবে ময়দায় পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হাবিব আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং আরো বেশি করে ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন হলেন। উনাকে আর কখনো রিযিকের জন্য চিন্তা করতে হয়নি। কারণ উনার ইন্তেকাল পর্যন্ত সবসময়ই কুদরতী রিযিকের ব্যবস্থা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(সুত্রঃ-চমৎকার ঘটনা)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন